Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

সুদিনের অপেক্ষায় কলকাতার ‘মিনি বাংলাদেশ’

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৫ আগস্ট ২০২৫, ০৮:৫১

সুদিনের অপেক্ষায় কলকাতার ‘মিনি বাংলাদেশ’

এক বছর আগেও কলকাতার ‘মিনি বাংলাদেশ’ খ্যাত ছোট এই এলাকাটি ছিল খাদ্য, আতিথেয়তা ও বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়ের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র। কিন্তু গত বছর বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরু ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর বাংলাদেশি পর্যটকদের সংখ্যা শূন্যের কাছাকাছি নেমে আসায় এলাকাটির ব্যবসায় ধস নেমেছে। এক বছর পেরিয়েও এলাকাটি ওই অস্থিরতার ফল ভোগ করছে, ব্যবসায় ক্ষতি ছাড়িয়েছে হাজার কোটি রুপির বেশি, বলছে টাইমস অব ইন্ডিয়া।

কলকাতার বিখ্যাত নিউ মার্কেটের কাছাকাছি ফ্রি স্কুল স্ট্রিট ও মারক্যুইস স্ট্রিট ঘেঁষে অবস্থিত এ ‘মিনি বাংলাদেশ’ দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশ থেকে যাওয়া পর্যটকদের অন্যতম পছন্দের স্থান।

এখানে সস্তায় হোটেল পাওয়া যায়, খাবারে মেলে ‘ওপার বাংলার’ পদ, কাছাকাছিই আছে রেলস্টেশন, বাস টার্মিনাল, আছে একাধিক চিকিৎসাসেবা কেন্দ্র।

এক বছর আগেও এই এলাকা এতটাই প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর ছিল যে পর্যটকদের ভিড়ে পা ফেলার উপায় ছিল না। আর এখন একসময়ের জমজমাট গলিগুলো একেবারেই শুনশান।

একাধিক ব্যবসায়িক সংগঠনের দেওয়া মোটাদাগের হিসাবেই এক বছরে ‘মিনি বাংলাদেশের’ লোকসান হাজার কোটি রুপি ছাড়িয়েছে বলে দেখা যাচ্ছে। তবে আসল ক্ষতি এর কয়েকগুণ বলে ধারণা অনেকের।

“হোটেল, খাবারের দোকান, ট্রাভেল এজেন্ট, মুদ্রা লেনদেন, চিকিৎসা সেবা এবং পরিবহন ব্যবসা; সব মিলিয়ে দৈনিক প্রায় তিন কোটি রুপি লেনদেন হতো। আমরা যদি নিউ মার্কেট আর বড়বাজারের ক্ষতিই হিসাব করি, তাও ৫ হাজার কোটি রুপি ছাড়িয়ে যাবে” বলেছেন ফ্রি স্কুল ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব হায়দার আলি খান।

এখন পর্যটক না থাকায় একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হয় দোকান গুটিয়ে নিয়েছে, নতুবা স্থানীয় ক্রেতা ধরায় মনোযোগী হয়েছে। “এই এক বছর আগেও পর্যটকবাহী একাধিক বাস প্রায় একই সময়ে পৌঁছাত, যে কারণে পার্কিং-ই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ত। আর এখন কয়েক দিন পেরিয়ে গেলেও একজন পর্যটকের দেখা পাওয়া যায় না” বলেছেন মারক্যুইস স্ট্রিটের একটি ট্রাভেল কোম্পানির ব্যবস্থাপক প্রবীর বিশ্বাস।

বাংলাদেশি মুদ্রার লেনদেনও এখন অনেকটাই থমকে পড়েছে। “টিকে থাকতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। পুরোপুরি বাংলাদেশি পর্যটক নির্ভরশীল ছিলাম আমরা,” বলেছেন মারক্যুইস স্ট্রিটের কারেন্সি এক্সচেঞ্জার অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি মোহাম্মদ ইন্তিজার।

ব্যবসায়ীদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে গত বছর রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ‘মিনি বাংলাদেশ’ এলাকায় থাকা ছোট ও মাঝারি মানের প্রায় ৪০ শতাংশ রেস্তোরাঁ বন্ধ হয়ে গেছে।

বড় বড় অনেক খাবারের দোকানকেও এখন টেনেটুনে চলতে হচ্ছে।

“ব্যবসা ২০ শতাংশে নেমে এসেছে, আমাদের অনেকের পক্ষেই টিকে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। আমরা কোনোরকমে ঝুলে আছি, ঘুরে দাঁড়ানোর অপেক্ষায় আছি,” বলেছেন রাঁধুনি রেস্তোরাঁর মালিক এনসি ভৌমিক।

ঢাকায় ক্ষমতার রদবদলই এখানকার ব্যবসায়ীদের জন্য ‘একমাত্র ধাক্কা’ নয়, তার আগে কোভিড মহামারির অভিঘাতও সামলাতে হয়েছে তাদের।

“মহামারির পর বড়সড় উত্থানের আশায় আমরা অনেকেই ব্যাপক বিনিয়োগ করেছিলাম। আমরা দোকান সংস্কার এবং ব্যবসা বড় করতে ঋণও নিয়েছি।

বড় বড় দোকান বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বাইরে পর্যটকদের আনাগোনা ঘিরে গড়ে ওঠা অর্থনীতি, যেমন বাড়িতে রান্না করা খাবার সরবরাহ, বাড়ি ভাড়া, ট্যুর গাইড এসবও একপ্রকার লাটে উঠেছে। হোটেলে কর্মী, রাঁধুনি, ড্রাইভার, খুচরা দোকানদার হিসেবে কাজ করা শত শত স্থানীয় বাসিন্দা হয়েছে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত।

“মহামারির পর যখন চাহিদা বেড়ে গেল, তখন আমি বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারে দুটি গাড়ি কিনি। ব্যবসা এত ভালো চলছিল যে অনেক সময় কাস্টমারদের ফিরিয়েও দিতে হতো। এখন আমি মাসে টেনেটুনে ৫-৬টার মতো বুকিং পাই, তাও স্থানীয়দের কাছ থেকে, যারা খুব বেশি খরচ করতে চায় না। এদিকে আমাকে কিস্তি দিতে হচ্ছে,” বলেন এলিয়ট রোডের বাসিন্দা ফারহান রসুল।

তথ্যসূত্র: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর

Logo