গাজার নামে অর্থ সংগ্রহ: মানবিক সহায়তা নাকি প্রতারণা?

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২৮ জুলাই ২০২৫, ০৯:৩৫

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার সংকটে সহমর্মিতা জানিয়ে বাংলাদেশে বিভিন্ন ব্যক্তি, সংগঠন ও সংস্থা নগদ অর্থ ও ত্রাণ সংগ্রহে এগিয়ে এসেছে। কিন্তু সহায়তার বাস্তব গতিপথ ও কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সংশ্লিষ্টরা, উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কূটনীতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।
অর্থ সংগ্রহের জোয়ার
বাংলাদেশজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে “গাজার পাশে দাঁড়ান” শিরোনামের প্রচারণা। মাস্তুল ফাউন্ডেশন, বাসমাহ ফাউন্ডেশন, আল-আজহার জাকাত অ্যান্ড চ্যারিটি হাউসসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন ও ব্যক্তি গাজাবাসীর জন্য অর্থ ও খাদ্য সহায়তা সংগ্রহ করছে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া সহায়তা সংগ্রহে সক্রিয় ভূমিকায় রয়েছেন, যার ফেসবুক পোস্টগুলো টাকা দিয়ে প্রচারও করা হয়েছে।
তহবিল পাঠানো: আইনগত বাধা
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান জানিয়েছেন, “বাংলাদেশ থেকে বিদেশে অর্থ পাঠাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন বাধ্যতামূলক। অনুমোদন ছাড়া অর্থ পাঠালে তা পাচার হিসেবে গণ্য হবে।” কিন্তু কেউই অনুমোদন নেয়নি বলেই জানান তিনি, যা হুন্ডি বা অবৈধ পথের আশঙ্কা বাড়াচ্ছে।
বাস্তবতায় সহায়তা পৌঁছায় কতটা?
ফিলিস্তিন দূতাবাসসহ বিভিন্ন সংস্থার দাবি অনুযায়ী গাজায় সহায়তা পৌঁছানো সম্ভব হলেও বিশ্লেষকরা বলছেন বাস্তবতা ভিন্ন। সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বলেন, “জাতিসংঘের ত্রাণও গাজায় পৌঁছাতে পারছে না। বাংলাদেশি কোনো সহায়তা সেখানে পৌঁছানো বাস্তব নয়।”
ফিলিস্তিন দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত ইউসুফ এস ওয়াই রামাদান স্পষ্ট করে বলেছেন, “গাজার নামে তহবিল সংগ্রহ অগ্রহণযোগ্য। সর্বোচ্চ ভালো ব্যবস্থাপনায়ও মাত্র ১০ শতাংশ সহায়তা গাজায় পৌঁছায়।”
GHF নামের একটি বিতর্কিত সংস্থা গাজায় ত্রাণ কার্যক্রম চালাচ্ছে, যার কেন্দ্রে সহায়তা নিতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি। সংস্থার কার্যক্রম পরিচালনা করছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল। জাতিসংঘসহ বহু মানবাধিকার সংস্থা সংস্থাটির কার্যক্রমের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) আ ন ম মুনীরুজ্জামান ব্যক্তিগত পর্যায়ের তহবিল সংগ্রহ বন্ধের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “দূতাবাস বা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সহায়তা পাঠানোর চেষ্টা করা যেতে পারে।”
ফিলিস্তিন রাষ্ট্রদূত একান্তভাবে অনুরোধ জানিয়েছেন, “গাজার নামে কেউ তহবিল সংগ্রহ না করুক। কেউ যদি সহায়তা পাঠাতে চান, তাহলে দূতাবাসের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করুন।”
বাংলাদেশের জনগণের সহানুভূতি নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়, কিন্তু সহায়তার স্বচ্ছতা ও কার্যকারিতা নিশ্চিত করা জরুরি। গাজার জনগণের পাশে দাঁড়াতে হলে সাংগঠনিক জবাবদিহিতা, সরকারি অনুমোদন এবং আন্তর্জাতিক সমন্বয় ছাড়া কোনো উদ্যোগই যথাযথ নয়- এমন মত বিশ্লেষকদের।
তথ্যসূত্র: দৈনিক বণিক বার্তা