চায়নিজ গভর্নমেন্ট স্কলারশিপ পেলেন ৮০ জন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২৪ জুলাই ২০২৫, ০৮:৫৭

২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে চীনের মর্যাদাপূর্ণ সরকারি বৃত্তি ‘চায়নিজ গভর্নমেন্ট স্কলারশিপ (সিজিএস)’ পেয়েছেন বাংলাদেশের ৮০ জন মেধাবী শিক্ষার্থী। তারা চীনের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি পর্যায়ে সম্পূর্ণ সরকারি সহায়তায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছেন। এ বৃত্তির আওতায় শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি, আবাসন, মাসিক ভাতা, স্বাস্থ্যবীমা, যাতায়াত খরচসহ সব ব্যয় বহন করে চীন সরকার।
শুধু চলতি বছর নয়, দীর্ঘ চার দশকেরও বেশি সময় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য চীনের উচ্চশিক্ষার দুয়ার খুলে রেখেছে এই বৃত্তি কর্মসূচি। ১৯৮১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪ হাজার ৫০০ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী এই বৃত্তি নিয়ে চীনে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পেয়েছেন। তাদের অনেকেই পরবর্তী সময় দেশে ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গবেষণা, প্রযুক্তি ও শিক্ষা ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।
চীনের শিক্ষা-গবেষণার মান ও প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক ক্যাম্পাসে পাঠদানের পদ্ধতি বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে চীনমুখী উচ্চশিক্ষার আগ্রহ দিন দিন বাড়িয়ে তুলছে। এই বৃত্তির মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে শুধু একাডেমিক নয়, বরং সাংস্কৃতিক ও পারস্পরিক সম্পর্ক আরো দৃঢ় হচ্ছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। চীনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ক্রমাগত উন্নতি করছে ও আন্তর্জাতিক র্যাঙ্কিংয়েও এগিয়ে যাচ্ছে। ফলে বিশ্বের নানা দেশের শিক্ষার্থীদের কাছে চীন এখন উচ্চশিক্ষার জন্য একটি জনপ্রিয় গন্তব্যে পরিণত হয়েছে।
শিক্ষাবিদদের মতে, চীনের উচ্চশিক্ষাব্যবস্থা বর্তমানে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ও গবেষণাভিত্তিক। প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা ও বৈচিত্র্যময় কোর্সের পাশাপাশি চীন সরকার প্রতি বছর বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য নানা ধরনের বৃত্তি প্রদান করে উচ্চশিক্ষার সুযোগ আরো বিস্তৃত করছে। তেমনই একটি বড় ও সম্মানজনক বৃত্তি কর্মসূচি হলো ‘চায়নিজ গভর্নমেন্ট স্কলারশিপ (সিজিএস)’। এই বৃত্তি পরিচালনা করে চায়নিজ স্কলারশিপ কাউন্সিল (সিজিএস) এবং এটি প্রতিটি দেশের চীনা দূতাবাসের সরাসরি তত্ত্বাবধানে প্রদান করা হয়।
চলতি বছরে অনেক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী আবেদন করেছিলেন সিজিএস স্কলারশিপের জন্য। তাদের মধ্য থেকে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হয়েছেন মোট ৮০ জন। দূতাবাস সূত্রে জানা যায়, তাদের মধ্যে স্নাতক পর্যায়ে ১৮ জন, স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ৪০, পিএইচডি পর্যায়ে ২১ এবং সিনিয়র স্কলার হিসেবে ১ জন শিক্ষার্থী এ বৃত্তির জন্য মনোনীত হয়েছেন। বৃত্তির সুবিধার মধ্যে রয়েছে টিউশন ফি, আবাসন, স্বাস্থ্যবীমা, চীনে যাতায়াতসহ সব ব্যয়ভার। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের জন্য নির্ধারিত রয়েছে মাসিক ভাতা ও স্নাতক পর্যায়ে ২ হাজার ৫০০ ইউয়ান, স্নাতকোত্তরে ৩০০০ ইউয়ান ও পিএইচডি পর্যায়ে ৩ হাজার ৫০০ ইউয়ান।
বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা দূতাবাসের কর্মকর্তা সান বলেন, চায়নিজ গভর্নমেন্ট স্কলারশিপ কর্মসূচি দুই দেশের জনগণের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া ও বন্ধুত্বকে গভীর করেছে। অনেক প্রাক্তন শিক্ষার্থী বর্তমানে বিজ্ঞানসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে সাফল্যের সঙ্গে কাজ করছেন এবং দুই দেশের সম্পর্ককে এগিয়ে নিচ্ছেন। চীন-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে সিজিএস বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও দুই দেশের চিরন্তন বন্ধুত্বে ইতিবাচক অবদান রাখবেন। এই বৃত্তি শুধু উচ্চশিক্ষার সুযোগই নয়, বরং চীন ও বাংলাদেশের মধ্যকার শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক বিনিময়কে আরো সুদৃঢ় করবে।
চায়নিজ গভর্নমেন্ট স্কলারশিপের আবেদন প্রক্রিয়া সাধারণত প্রতি বছরের ডিসেম্বরে শুরু হয়। ফেব্রুয়ারিতে প্রাথমিক ফলাফল প্রকাশের পর সাক্ষাৎকার ও যাচাই-বাছাইয়ের মধ্য দিয়ে মে থেকে জুলাইয়ের মধ্যে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হয়। আগ্রহী শিক্ষার্থীদের সিজিএসের ওয়েবসাইটে অনলাইনে আবেদন করতে হয়।
এ বছর যারা বৃত্তি পেয়েছেন, তারা চীনের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়, যেমন পিকিং ইউনিভার্সিটি, সিংহুয়া ইউনিভার্সিটি, সাংহাই জিয়াওটং ইউনিভার্সিটি, ঝেজিয়াং ইউনিভার্সিটি প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন বিষয়ে অধ্যয়ন করবেন। নির্বাচিত বিভাগগুলোর মধ্যে রয়েছে বিজ্ঞান, প্রকৌশল, চিকিৎসা, অর্থনীতি, ব্যবস্থাপনা, চীনা ভাষা শিক্ষা ও অন্যান্য।
স্নাতক পর্যায়ে মনোনীত পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমি অত্যন্ত আনন্দিত ও গর্বিত। এই সুযোগ আমার জীবনে এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে।’
বাংলাদেশ-চীন ইয়ুথ স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিওয়াইএসএ) সভাপতি জান্নাতুল আরিফ বলেন, ‘চায়নিজ গভর্নমেন্ট স্কলারশিপ বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য একটি আশীর্বাদের মতো। এর মাধ্যমে চীনের উন্নত শিক্ষা ও গবেষণা থেকে আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছেন সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। ফলে আমাদের দেশের শিক্ষা ও গবেষণায় অবদান রাখার একটি সহায়ক পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এই স্কলারশিপ কেবল ব্যক্তিগত অর্জন নয়, এটি চীন-বাংলাদেশের বন্ধুত্বকে আরো দৃঢ় করবে।’
জানা গেছে, বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির অনুমতিপত্রসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র গ্রহণ করেছেন এবং চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই চীনের উদ্দেশে যাত্রা করবেন।
উল্লেখ্য, চায়নিজ গভর্নমেন্ট স্কলারশিপ হলো চীনের সর্বোচ্চ মর্যাদাপূর্ণ সরকারি বৃত্তি কর্মসূচি, যা সিজিএস স্কলারশিপ নামেও পরিচিত। এছাড়া বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য আরো কিছু চীনা বৃত্তি প্রোগ্রাম রয়েছে, যেমন বিভিন্ন প্রাদেশিক সরকারের বৃত্তি, পৌর সরকার বৃত্তি, বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক বৃত্তি, কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট বৃত্তি, ভোকেশনাল শিক্ষা স্কলারশিপ ইত্যাদি।
চীনের প্রতি বছর দেওয়া এই বৃত্তি কর্মসূচি বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যে চীনমুখী উচ্চশিক্ষার আগ্রহকে উল্লেখযোগ্য হারে বাড়িয়ে তুলেছে।
তথ্যসূত্র: দৈনিক প্রথম আলো