Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

মেডিকেল স্ক্যামে ফাঁসছে বাংলাদেশি অভিবাসীরা

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৫ জুলাই ২০২৫, ০০:০৬

মেডিকেল স্ক্যামে ফাঁসছে বাংলাদেশি অভিবাসীরা

মধ্যপ্রাচ্যে কর্মসংস্থানের আশায় যাত্রা করতে চাওয়া হাজারো বাংলাদেশি অভিবাসী এখন এক ভয়াবহ মেডিকেল স্ক্যামের ফাঁদে পড়ে আর্থিক ক্ষতি, মানসিক যন্ত্রণা ও পেশাগত বিপর্যয়ের শিকার হচ্ছেন। স্বাস্থ্য পরীক্ষার নামে গঠিত একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট ভুয়া মেডিকেল সনদ দিয়ে অভিবাসীদের প্রতারিত করছে, যা শুধু দুর্নীতি নয়, একটি মানবিক বিপর্যয়।

এই সিন্ডিকেটের মূল চালিকাশক্তি হলো জিসিসি অনুমোদিত মেডিকেল সেন্টারগুলো, যেগুলোর মধ্যে মাত্র ২০টি সেন্টার ৯০% রেফারেল পায়। অথচ দেশে অনুমোদিত সেন্টারের সংখ্যা ২০০-এর বেশি। এই সেন্টারগুলো আগেই শত শত রেফারেল বুক করে রাখে, ফলে অন্য সেন্টারগুলো কাজ পায় না। একেকটি সিন্ডিকেট যুক্ত সেন্টার দিনে ৫০০ জন পর্যন্ত কর্মীর পরীক্ষা করে, যেখানে ২৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হয় “ফিট” সনদের জন্য, যা সরকারি ফির তিন গুণ।

এই প্রতারণার শিকার হয়েছেন কক্সবাজারের রতন মিয়া, যিনি ২৫ হাজার টাকা দিয়ে “ফিট” সনদ নিয়ে সৌদি আরবে পৌঁছানোর পর “অযোগ্য” ঘোষণা পেয়ে দেশে ফেরত পাঠানো হন। এখন তিনি ঋণের বোঝায় জর্জরিত এবং যাদের থেকে লোন নিয়েছেন তাদের তাড়া খাচ্ছেন। অন্যদিকে, ঢাকার পল্টনের একটি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে সোহেল হাওলাদার ১০ হাজার টাকার “স্ট্যান্ডার্ড” প্যাকেজ গ্রহণ করেন, কিন্তু তার যাত্রা প্রক্রিয়াগত জটিলতায় আটকে আছে।

এই সিন্ডিকেটের পেছনে রয়েছেন মোহাম্মদ বাশির, যিনি ডজনখানেক সেন্টারের মালিক এবং রাব্বি ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে যুক্ত। তার সঙ্গে আছেন নোমান চৌধুরী ও এনাম চৌধুরী, যারা সিন্ডিকেটের মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে পরিচিত। যদিও বাশির দাবি করেছেন, “আমি কখনো কোনো ভুয়া সনদ বা তদন্তের কথা শুনিনি।”

এই পরিস্থিতিতে GCC Approved Medical Centres Association–এর সদস্যরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং সিন্ডিকেট যুক্ত সেন্টারগুলোর লাইসেন্স বাতিল ও রেফারেল বণ্টনে স্বচ্ছতা দাবি করেছেন। তাদের মতে, “এটি শুধু দুর্নীতি নয়, এটি জীবন বিপন্নকারী অপরাধ।”

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব এ.জে.এম. নুরুল হক জানিয়েছেন, “আমরা অতিরিক্ত চার্জ ও অনিয়মের অভিযোগ শুনেছি, তবে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাইনি।” তিনি আরো বলেন, “আমরা জিসিসি ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি এবং নিজস্ব তদন্তও চালাচ্ছি।”

এই স্ক্যাম শুধু অর্থনৈতিক নয়, এটি বাংলাদেশের শ্রমবাজারের সুনাম ক্ষুণ্ন করছে। “অযোগ্য” কর্মীরা বিদেশে গিয়ে ফেরত আসছেন, যা দেশের ভাবমূর্তি ও ভবিষ্যৎ নিয়োগের সম্ভাবনাকে হুমকির মুখে ফেলছে।

এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে প্রয়োজন সিন্ডিকেটবিরোধী কঠোর ব্যবস্থা, স্বচ্ছ রেফারেল পদ্ধতি ও অভিবাসীদের জন্য নিরাপদ মেডিকেল প্রক্রিয়া। অভিবাসীরা শুধু চাকরি নয়, স্বপ্ন, পরিবার ও ভবিষ্যৎ নিয়ে বিদেশে যান; এই প্রতারণা তাদের জীবনকে অনিশ্চয়তায় ঠেলে দিচ্ছে।

তথ্যসূত্র: The Dail্y star, asianews.network


Logo