বিমানবন্দরে গাড়ি ভাড়া: সিন্ডিকেট চক্রের দৌরাত্ম্যে নাজেহাল প্রবাসীরা

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২৫, ০৮:৫৭

বিদেশ থেকে দীর্ঘ যাত্রা শেষে দেশে ফিরলেও প্রবাসীদের দুর্ভোগ শেষ হয় না। ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছেই শুরু হয় আরেক যুদ্ধ; বাড়ি যাওয়ার জন্য মাইক্রোবাস ভাড়া করতে গিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া, দালালদের প্রতারণা ও নিরাপত্তাহীনতার মুখোমুখি হন তারা। এই সমস্যা শুধু আর্থিক নয়, বরং এটি প্রবাসীদের প্রতি রাষ্ট্রীয় অবহেলার প্রতিচ্ছবি।
অতিরিক্ত ভাড়া ও দালালদের দৌরাত্ম্য
ঢাকা ট্রিবিউনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিমানবন্দরে প্রবাসীদের জন্য প্রবাসী লাউঞ্জ চালু করা হলেও পরিবহন-সংক্রান্ত সহায়তা নেই, ফলে তারা বাইরে গিয়ে দালালদের মুখোমুখি হন। রেন্ট-এ-কার এজেন্সির তালিকা না থাকায় চালকরা ইচ্ছেমতো ভাড়া দাবি করেন। যেমন, ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জের ভাড়া যেখানে ১,৫০-২,০০০ টাকা হওয়ার কথা, সেখানে ৪,০০০-৫,০০০ টাকা পর্যন্ত দাবি করা হয়।
কেস স্টাডি ১: কামরুল ইসলাম (সূত্র: OKUP ফিল্ড রিপোর্ট)
রিয়াদফেরত কামরুল ইসলাম রাত ২টায় বিমানবন্দরে পৌঁছান। নারায়ণগঞ্জ যেতে চাইলে একজন চালক ৪,৫০০ টাকা দাবি করেন। রাজি না হলে চালক বলেন, “এখানে সবাই এই রেট নেয়।” বাধ্য হয়ে ভাড়া দেন, কিন্তু গাড়িতে উঠে দেখেন আরো তিনজন যাত্রী; একজনের জন্য ভাড়া নিয়েও শেয়ারিং গাড়ি।
কেস স্টাডি ২: রুবেল আহমেদ (সূত্র: OKUP ও TBS News)
সিলেটগামী রুবেল আহমেদ একটি মাইক্রোবাস ভাড়া করেন। চালক বলেন, “সরাসরি সিলেট নিয়ে যাব।” কিন্তু টঙ্গী পৌঁছেই গাড়ি থামিয়ে তিনজন লোক উঠে। তারা ভয় দেখিয়ে টাকা, ফোন ও পাসপোর্ট নিয়ে যায়। পরে চালকও উধাও হয়ে যায়। TBS News–এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রবাসীরা দেশে ফিরে ছিনতাই ও প্রতারণার শিকার হচ্ছেন, কিন্তু আইনি সহায়তা পান না।
কেস স্টাডি ৩: রওশন আলী (সূত্র: OKUP ফিল্ড ডেটা)
মালয়েশিয়াফেরত রওশন আলী বিমানবন্দরের বাইরে একজনকে ‘রেন্ট-এ-কার এজেন্ট’ হিসেবে পান। তিনি একটি মাইক্রোবাসে তুলে দেন, কিন্তু গাড়ি ছিল অচেনা চালকের। মাঝপথে গাড়ি নষ্ট হয়, চালক ফোন বন্ধ করে চলে যান। রওশন ৩ ঘণ্টা রাস্তায় বসে থাকেন, কোনো সহায়তা পান না।
নিরাপত্তা ও নীতিগত সংকট:
জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (JICA) এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ঢাকা বিমানবন্দরে যাত্রী সেবার মান নিম্ন, নিরাপত্তা দুর্বল এবং অপারেশনাল ব্যবস্থাপনা অপর্যাপ্ত। যদিও প্রবাসী লাউঞ্জ, ই-গেট ও লাগেজ ডেলিভারি উন্নত হয়েছে, কিন্তু বাহিরে পরিবহন-সংক্রান্ত সহায়তা নেই।
OKUP-এর গবেষণা বলছে, প্রবাসীরা দেশে ফিরে বিএমইটিতে অভিযোগ করলেও মাত্র ৩৯% অভিযোগের নিষ্পত্তি হয় এবং ক্ষতিপূরণ সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা। অথচ তারা সরকার নির্ধারিত ব্যয়ের তিন থেকে ছয় গুণ বেশি খরচ করে বিদেশে যান।
সম্ভাব্য সমাধান:
- বিমানবন্দরে নিবন্ধিত রেন্ট-এ-কার বুথ স্থাপন
- ভাড়ার নির্ধারিত তালিকা প্রকাশ ও ডিজিটাল বুকিং ব্যবস্থা চালু
- প্রবাসীকল্যাণ ডেস্কে পরিবহন সহায়তা অন্তর্ভুক্ত করা
- ছিনতাই ও প্রতারণার অভিযোগে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ
এই সমস্যা সমাধান না হলে প্রবাসীদের নিরাপত্তা ও মর্যাদা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।
মাইগ্রেশন কনসার্ন রিপোর্ট