Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

লিবিয়া থেকে ফিরেছেন প্রাণে বেঁচে যাওয়া তিন বাংলাদেশি

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২৫, ০৮:৫২

লিবিয়া থেকে ফিরেছেন প্রাণে বেঁচে যাওয়া তিন বাংলাদেশি

মাত্র ৯ মাসে জীবনের সব স্বপ্ন চুরমার। ইতালিতে চাকরির প্রলোভনে লিবিয়ায় গিয়ে মানব পাচারের ভয়াবহ চক্রের শিকার হয়ে নির্মম নির্যাতন সহ্য করে অবশেষে দেশে ফিরলেন ঝিনাইদহের মতিউর রহমান সাগর, কুষ্টিয়ার তানজির শেখ ও নোয়াখালীর আলমগীর হোসেন। আজ সকাল সাড়ে ৭টায় বুরাক এয়ারলাইন্সের একটি বিশেষ ফ্লাইটে তারা দেশে পৌঁছান, সঙ্গে ফিরেছেন মোট ১৪১ জন বাংলাদেশি।

পাচারের পথ: প্রলোভন, প্রতারণা ও ভয়াবহ গন্তব্য

২০২৩ সালে সাগর ও তানজির প্রত্যেকে চার লাখ টাকা খরচ করে লিবিয়ায় গিয়েছিলেন, আর আলমগীর দুই বছর আগেই তিন লাখ টাকা দিয়ে বিদেশ পাড়ি দিয়েছিলেন। দালালরা তাদের ইতালিতে ভালো চাকরি দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিল, কিন্তু বাস্তবে পৌঁছে দেন ত্রিপোলির ভয়ংকর এক মাফিয়া চক্রের কাছে।

সেখানে আরো ৮০ জন বাংলাদেশির সঙ্গে মাসের পর মাস বন্দি রাখা হয়, চালানো হয় লোহার রড দিয়ে পেটানো, খাবার ও চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত রাখা, এমনকি নির্যাতনের ভিডিও পাঠিয়ে মুক্তিপণ দাবি করা হয়। এক পর্যায়ে পাচারকারীরা ভেবেছিলেন তারা মারা গেছেন, তাই তাদের মরুভূমিতে ফেলে রেখে পালিয়ে যান।

"মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতাম, প্রাণ ফিরে পাই বাংলাদেশিদের হাতে"

তানজির শেখ বলেন, “লিবিয়ায় আমাদের দিনের পর দিন বেঁধে রাখতো, লোহার রড দিয়ে পেটাতো। নির্যাতনের ভিডিও আমাদের পরিবারকে পাঠিয়ে মুক্তিপণ নিয়েছে। মারা গেছি ভেবে তারা আমাদের মরুভূমিতে ফেলে রেখে গিয়েছিল। বেঁচে কোনোদিন যে দেশে ফিরতে পারব, ভাবিনি।” (সূত্র: ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম)

সেই মরুভূমি থেকে কয়েকজন বাংলাদেশি শ্রমিক তাদের মৃতপ্রায় অবস্থায় উদ্ধার করেন। পরে লিবিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাস ও আইওএমের সহায়তায় তারা চিকিৎসা ও নিরাপত্তা পান।

আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় শুরু হয় উদ্ধার প্রক্রিয়া

তিনজনের পরিবার ব্র্যাকের সঙ্গে যোগাযোগ করে। এরপর ব্র্যাক, যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাফিকিং ইন পারসনস (TIP) অফিস, আইওএম ওয়াশিংটন, ও ইন্টারন্যাশনাল জাস্টিস মিশন (IJM)-এর সমন্বিত উদ্যোগে তাদের লিবিয়ায় সেইফ হোমে স্থানান্তর, আইনি সহায়তা ও অবশেষে দেশে প্রত্যাবাসন সম্ভব হয়।

ব্র্যাকের সহযোগী পরিচালক শরিফুল হাসান বলেন, “ইউরোপে পাঠানোর লোভে যাদের লিবিয়ায় নেওয়া হয়, তাদের বেশির ভাগই কোনো চাকরি পান না। উল্টো ক্যাম্পে আটক রেখে ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হন। মুক্তিপণের মাধ্যমে পরিবার ধ্বংস হয়ে যায়, কিন্তু লিবিয়ায় যাওয়ার প্রবণতা এখনো থামছে না।” (সূত্র: BRAC Migration & Youth Platform, ২০২৫)

সরকার ও আইনি পদক্ষেপ

এই ঘটনায় মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে ঢাকায় দুটি মামলা দায়ের হয়েছে। পিবিআইর তদন্তে ইতোমধ্যে দুই পাচারকারী গ্রেপ্তার হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড, আইওএম লিবিয়া মিশন ও বাংলাদেশ দূতাবাস প্রত্যাবাসন কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

ব্র্যাক মাইগ্রেশন ওয়েলফেয়ার সেন্টারের ম্যানেজার আল-আমিন নয়ন, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের TIP Hero 2024 পুরস্কার পেয়েছেন; তিনি বলেন, “গত মাসে আরো দুইজন পাচার হওয়া ব্যক্তিকে দেশে ফিরিয়ে এনেছি। শুধু ২০২৪ সালেই ৪০ জনকে বিভিন্ন দেশ থেকে উদ্ধার করেছি।” (সূত্র: TBS News ও BRAC MWC রেকর্ড, ২০২৪-২৫)

বিমানবন্দরে বিদেশফেরতদের জরুরি সহায়তার জন্য গত ৮ বছরে ৩৭ হাজারের বেশি প্রবাসীকে ব্র্যাক সহযোগিতা দিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে আশ্রয়, খাদ্য, চিকিৎসা, আইনি পরামর্শ ও পরিবারে ফেরত পাঠানো।

এই ঘটনার মাধ্যমে আবারে প্রমাণিত হলো- অবৈধভাবে ইউরোপে যাওয়ার স্বপ্ন মানবিক বিপর্যয়ে পরিণত হতে পারে, যদি না যথাযথ নিয়ন্ত্রণ, সচেতনতা ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

মাইগ্রেশন কনসার্ন রিপোর্ট

Logo