সিন্ডিকেটে মালয়েশিয়ায় অভিবাসন ব্যয় বাড়েনি: উপদেষ্টা

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২৫, ০০:১৪

প্রবাসী কর্মসংস্থান ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল অবশেষে স্বীকার করেছেন সিন্ডিকেটের কারণে মালয়েশিয়ায় অভিবাসন ব্যয় বাড়েনি; বরং অভিবাসন ব্যয় বেড়েছে মধ্যস্বত্বভোগী দালাল চক্রের কারণে। তিনি বলেন, আমরা সীমিত সংখ্যক লাইসেন্সের মাধ্যমে কর্মী পাঠালে বলে আমি সিন্ডিকেটের পক্ষে, আর না পাঠালে আমি ব্যর্থ; লোক না পাঠালে কয়েক লাখ পরিবার বঞ্চিত হবে।
বুধবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় আয়োজিত ‘জাপানের শ্রম বাজার: সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব কথা বলেন তিনি।
ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘সিন্ডিকেটের কারণে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক যাওয়ার খরচ বাড়েনি। মালয়েশিয়ার সঙ্গে আগের সরকার চুক্তি করে রেখেছে যে, ‘তোমরা রিক্রুটিং এজেন্সির লিস্ট দিবা, আমরা সিলেক্ট করব।’ এটা দুপক্ষের আনুষ্ঠানিক চুক্তি। যেটাকে আমরা কখনো কখনো ‘সিন্ডিকেট’ বলি। আমরা যখন দায়িত্ব নিয়েছি, তখন আমাদের সবাই বলেছে সিন্ডিকেট করা যাবে না। সিন্ডিকেট না করতে হলে চুক্তি পরিবর্তন করতে হবে। সেটা তো মালয়েশিয়া সরকারকে পিটিয়ে করতে পারব না। এখন তাদের (মালয়েশিয়া) সঙ্গে সমঝোতা করতে হবে। যদি সে চুক্তি পরিবর্তন না করে, তাহলে আমার সামনে দুটি পথ খোলা আছে।
একটি হচ্ছে তার (মালয়েশিয়ার) কথা অনুযায়ী ২৫, ৫০ বা ১০০ রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে পাঠানো, অন্যটি তাদের বলা যে, আমরা লোকই পাঠাব না। এখন আমি যদি ২৫, ৫০ বা ১০০ এজেন্সির মাধ্যমে লোক পাঠাই, তাহলে সবাই বলবে আমি সিন্ডিকেটের সঙ্গে যুক্ত হয়েছি। কুৎসা রটনা করবে, আবার যদি কর্মী না পাঠাই, তাহলে বলবে আমরা ব্যর্থ। আমার হাজার হাজার কর্মী যেতে পারবে না। এটা মালয়েশিয়া মনে রাখবে। লোক না পাঠালে পরবর্তী সময়ে আমার ১ থেকে ২ লাখ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সবাই এ ব্যর্থতার জন্য আমাকে দোষারোপ করবে। আমরা পুরো পিকচারটা জানার চেষ্টা করি না। আমরা সিন্ডিকেট সিন্ডিকেট করে ভালো বলতে পারি। সিন্ডিকেট মানে মনোপলি। মনোপলি মানে হচ্ছে শ্রমিকদের কাছ থেকে বেশি অর্থ নেওয়া।
ড. আসিফ নজরুল আরো বলেন, মালয়েশিয়ায় সিন্ডিকেট হয়েছিল; যদি বলি ৬-৭ লাখ টাকায় লোক গিয়েছে। দেখেন সৌদি আরবে তো সিন্ডিকেট নেই, বাহরাইন, কুয়েত ও কাতারে সিন্ডিকেট নেই। সেখানে কি ৬-৭ লাখ টাকায় লোক যায় না? বলেন আপনারা। সমস্যা কি সিন্ডিকেট? সিন্ডিকেটও সমস্যা; সিন্ডিকেট ছাড়াও সমস্যা। আপনাদের আমি বলি, সমস্যা হচ্ছে অনেক মধ্যস্বত্বভোগী (দালাল) আছে। যদি আপনি কয়েকটা (এজেন্সি) নির্দিষ্ট করে দেন, সেখানেও মধ্যস্বত্বভোগী, যদি না করে দেন, সেখানেও মধ্যস্বত্বভোগী।
আসিফ নজরুল বলেন, সৌদি আরবে সামান্য উটের খামারে কাজ করা শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলেছি, তারা বলেছে ৭ লাখ টাকা দিয়ে গিয়েছে। মরুভূমির মধ্যে বস্তির চাইতেও খারাপ একটা ঘরে থাকে, সে কত টাকা ব্যয় করে সেখানে গিয়েছে। আমার কাছে ভিডিও ফুটেজ আছে, ওই শ্রমিক আমাকে জানিয়েছে, স্যার প্রথমে নিয়েছে ৫ লাখ টাকা; পরে নিয়েছে আরো ৩ লাখ; মোট ৮ লাখ টাকা। আমাদের সমস্যা হলো, যারা অভিবাসী নিয়ে কাজ করে, তাদের মধ্যে একটা গ্রুপ আছে অপ্রয়োজনীয়ভাবে ‘হিউজ ডিমান্ড’ করে।
ড. আসিফ নজরুল আরো বলেন, মালয়েশিয়ার বিষয়ে একটা হাইপ উঠছে যে, মালয়েশিয়া ১০ থেকে ১২ লাখ কর্মী নেবে। আমি সেখান থেকে ঘুরে এসেছি। মালয়েশিয়ায় আগামী এক বছরে বাংলাদেশ থেকে খুব বেশি হলে ৩০ থেকে ৪০ হাজার কর্মী নেবে।
জাপানের শ্রমবাজার বিষয়ে তিনি আরো বলেন, ‘জাপানে কর্মীর চাহিদা রয়েছে। কিন্তু সেই চাহিদা পূরণের সক্ষমতা কি আমাদের রয়েছে? কারণ আমাদের অদক্ষ শ্রমিক আছে। ভাষা শিখছে; কিন্তু সে দক্ষ হতে পারছে না। এখন আমাদের সমাধান একটাই, জাপানে কর্মীর চাহিদা অনুযায়ী কর্মীকে দক্ষ করতে হবে। আমরা জাপান সেল করেছি। সেখানে একটা ডেডিকেটেড ওয়েবসাইট করা হবে।’
জাপানের ক্ষেত্রে আমরা আমাদের দিক থেকে কোনো প্রক্রিয়া বাকি রাখব না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এর পাশাপাশি কর্মীদের দক্ষ করার জন্য আমরা প্রাইভেট পাবলিক পার্টনারশিপের কথা ভাবছি। এছাড়া আমরা জাপানি উদ্যোক্তাদের বলছি যে, আপনি টিটিসির দায়িত্ব নিয়ে নিন। আপনি দায়িত্ব নিয়ে জাপান থেকে লোক এনে দক্ষতার প্রশিক্ষণ দেন। আমরা পুরো টিটিসি আপনাকে দিয়ে দেব।’
তথ্যসূত্র: দৈনিক কালবেলা