Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

নেপালের কাছে কি মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার হারাতে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৫, ১৩:১০

নেপালের কাছে কি মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার হারাতে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

মালয়েশিয়া বহু বছর ধরে বাংলাদেশি শ্রমিকদের অন্যতম প্রধান গন্তব্য। গার্মেন্ট, নির্মাণ, পরিষেবা ও কৃষিভিত্তিক শিল্পে লাখো বাংলাদেশি শ্রমিক দেশটিতে কর্মরত রয়েছেন। কিন্তু সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে শ্রমবাজারে বাংলাদেশের অবস্থান মারাত্মক সংকটে পড়েছে। একদিকে নিয়োগ সিন্ডিকেটের দুর্নীতি ও অতিরিক্ত খরচ, অন্যদিকে কয়েকজন বাংলাদেশি শ্রমিকের জঙ্গি-সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ; এসব মিলিয়ে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের ইমেজে বড়োসড়ো ধাক্কা লেগেছে।

ইতোমধ্যে মালয়েশিয়ান সরকার, নিয়োগদাতা সংস্থা এবং শ্রম প্রশাসন কর্মী নিয়োগে নেপালকে বিকল্প উৎস হিসেবে গুরুত্ব দিচ্ছে। নেপাল থেকে আগত শ্রমিকরা তুলনামূলকভাবে কম খরচে, অধিকতর দক্ষ এবং নিয়োগের ক্ষেত্রে জটিলতা ছাড়াই পৌঁছে যাচ্ছেন মালয়েশিয়ায়। এই প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ ক্রমেই পিছিয়ে পড়ছে।

এমন বাস্তবতায় উদ্বেগ ছড়িয়েছে জঙ্গি-সংশ্লিষ্টতা নিয়ে। চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় অন্তত ৩৬ জন বাংলাদেশি শ্রমিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যারা ইসলামিক স্টেট (IS)-এর সঙ্গে সংযুক্ত একটি চক্রে সক্রিয় ছিলেন বলে দাবি করেছে দেশটির পুলিশ। তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও মেসেজিং অ্যাপ ব্যবহার করে চরমপন্থি মতবাদ ছড়াতেন, সদস্য সংগ্রহ করতেন এবং আন্তর্জাতিক মানি ট্রান্সফার অ্যাপ ব্যবহার করে সিরিয়া ও বাংলাদেশে অর্থ পাঠাতেন। পুলিশ জানিয়েছে, এই চক্রে আরো অন্তত দেড়শ বাংলাদেশি শ্রমিক যুক্ত থাকতে পারে।

এই পরিস্থিতিতে মালয়েশিয়া সরকার বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নিয়োগে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করছে। সরকারের সিদ্ধান্তে ইতোমধ্যে কিছু নিয়োগ বন্ধ রাখা হয়েছে, বিশেষ করে নির্মাণ ও গার্মেন্ট খাতের অনানুষ্ঠানিক নিয়োগ। নিয়োগ ব্যয় এবং সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণেও বড় ধরনের সংকট তৈরি হয়েছে, যেখানে একজন শ্রমিকের মালয়েশিয়া পৌঁছাতে গড়ে খরচ হচ্ছে প্রায় ৪,৫০০ মার্কিন ডলার, যা নেপালি শ্রমিকদের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি।

এই সংকট শুধু অর্থনৈতিক নয়, বরং বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তিরও বড় ক্ষতি। বাংলাদেশ থেকে যাওয়া শ্রমিকরা এখন মালয়েশিয়ায় কম প্রিয়, কম নিরাপদ এবং অনভিপ্রেত হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছেন। দেশটির শ্রম প্রশাসন ইঙ্গিত দিয়েছে, ভবিষ্যতে বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য কোটা সীমিত করা হতে পারে এবং চুক্তি নবায়ন কঠিন করে তোলা হবে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই বিপর্যয় থেকে উত্তরণের জন্য বাংলাদেশ সরকারের জরুরি ভিত্তিতে কয়েকটি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।যেমন সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রিত নিয়োগ ব্যবস্থা বাতিল, স্বচ্ছ ও প্রতিযোগিতামূলক নিয়োগ চালু, জঙ্গি-সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে দ্রুত তদন্ত ও আইনি ব্যবস্থা এবং শ্রমিকদের দক্ষতা উন্নয়ন ও নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত করা।

মালয়েশিয়ায় শ্রমবাজার সংকোচনের এই প্রেক্ষাপট শুধু চাকরি হারানো নয়, বরং প্রবাসীদের জীবনমান, দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের দীর্ঘমেয়াদি চাপে পরিণত হচ্ছে।

মাইগ্রেশন কনসার্ন রিপোর্ট 

Logo