
সৌদি আরবে কর্মসংস্থানের আশায় পাড়ি জমানো হাজার হাজার বাংলাদেশি শ্রমিক এখন চরম মানবিক সংকটে। ‘ফ্রি ভিসা’ নামে প্রতারণার ফাঁদে পড়ে তারা কাজ, খাবার ও বাসস্থানহীন অবস্থায় ফুটপাথে রাত কাটাচ্ছেন, এমনকি অনেকেই অবৈধ অভিবাসী হিসেবে গ্রেপ্তার ও দেশে ফেরত পাঠানোর ঝুঁকিতে রয়েছেন।
‘ফ্রি ভিসা’ আসলে কী?
সৌদি আরবে ফ্রি ভিসা নামে কোনো বৈধ ভিসা নেই। এটি মূলত একটি অবৈধ চুক্তিভিত্তিক ভিসা, যেখানে স্পন্সর (কাফিল) টাকা নিয়ে শ্রমিককে নিজের নামে ভিসা দিয়ে অন্যত্র কাজ করতে ‘অনুমতি’ দেন।
শ্রমিকরা ৪-৫ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ করে এই ভিসা সংগ্রহ করেন অথচ সৌদি পৌঁছে কোনো নির্দিষ্ট চাকরি বা বাসস্থান পান না। এদিকে স্পন্সরকে মাসিক টাকা দিতে হয়, নইলে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার ভয় থাকে।
বাস্তবতা: কাজ নেই, খাবার নেই, ঘুম ফুটপাথে
মুন্সীগঞ্জের তুহিন জানান, তিনি গার্ডেনারের ভিসায় গিয়ে মাসে মাত্র ৭০০ রিয়াল আয় করতেন, যার মধ্যে ৪০০ রিয়াল বাসা ভাড়া ও ৩০০ রিয়াল স্পন্সরকে দিতে হতো। কাজের অভাবে অনেকেই ফুটপাথে, মসজিদের বারান্দায় বা নির্মাণাধীন ভবনে রাত কাটাচ্ছেন। খাবার জোগাড় করতে হচ্ছে দাতব্য সংগঠন বা সহকর্মীদের সহায়তায়। এর পাশাপাশি পাসপোর্ট জব্দ, ইকামা (রেসিডেন্স পারমিট) না থাকায় ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা পাঠানো সম্ভব নয়, ফলে হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠাতে বাধ্য হচ্ছেন।
আইনি ঝুঁকি ও মানবাধিকার লঙ্ঘন
- স্পন্সর বা মালিকের বাইরে কাজ করা আইনত অপরাধ, ফলে পুলিশ ধরলে জেল বা দেশে ফেরত পাঠানোর ঝুঁকি
- নারী শ্রমিকদের ক্ষেত্রে যৌন ও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ বাড়ছে
- কাফালা ব্যবস্থার কারণে চাকরি পরিবর্তন বা অভিযোগ জানানো প্রায় অসম্ভব
সামগ্রিক পরিস্থিতিতে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমছে, কারণ অবৈধ শ্রমিকরা ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার করতে পারছেন না। এদিকে দেশে শ্রমিকদের পরিবার ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ছে, কারণ তারা ভিসার জন্য জমি বিক্রি বা ঋণ নিয়েছেন। অন্যদিকে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, কারণ সৌদি কর্তৃপক্ষ অবৈধ শ্রমিকদের সংখ্যা বাড়ায় উদ্বিগ্ন।
এ অবস্থায় বিশেষজ্ঞরা বলছেন
- ‘ফ্রি ভিসা’ বন্ধে দুই দেশের যৌথ পদক্ষেপ প্রয়োজন
- রিক্রুটিং এজেন্সির লাইসেন্স ও কার্যক্রম কঠোরভাবে তদারকি করতে হবে
- প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে স্বচ্ছ ও কম খরচে অভিবাসন নিশ্চিত করতে হবে
- দূতাবাসে আশ্রয়কেন্দ্র, আইনি সহায়তা ও জরুরি খাদ্য সহায়তা জোরদার করতে হবে
এই সংকট শুধু অভিবাসন ব্যবস্থার নয়, বরং মানবাধিকার, অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের গভীর সংকট।
মাইগ্রেশন কনসার্ন রিপোর্ট