গৃহকর্মী ভিসায় গিয়ে সৌদি আরবে ভিক্ষাবৃত্তিতে বাংলাদেশি নারীরা

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৫, ১১:৩৮

সৌদি আরবে গৃহকর্মী ভিসায় গিয়ে বাংলাদেশি নারী শ্রমিকদের একটি অংশ ভিক্ষাবৃত্তি ও অন্যান্য অপরাধে জড়িয়ে পড়ার ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। অভিবাসন বিশ্লেষক ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, শারীরিক নির্যাতন, বেতন না পাওয়া, পাসপোর্ট জব্দ ও কাজের অমানবিক পরিবেশ অনেক নারীকে বাধ্য করছে পালিয়ে যেতে, যার পরিণতিতে তারা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন।
ভিসার নামে প্রতারণা ও বাস্তবতা
বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে নারী শ্রমিক পাঠানো হয় মূলত গৃহকর্মী ভিসার মাধ্যমে, যেখানে তাদের কাজের ধরন, নিরাপত্তা ও বেতন সংক্রান্ত প্রতিশ্রুতি থাকে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে—
- অনেক নারী দালালের মাধ্যমে অতিরিক্ত অর্থ দিয়ে ভিসা সংগ্রহ করছেন, অথচ সেখানে গিয়ে চুক্তির বাইরে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন
- কাফালা (স্পন্সরশিপ) ব্যবস্থার কারণে তারা চাকরি পরিবর্তন করতে পারেন না, ফলে নির্যাতনের শিকার হয়েও বাধ্য হয়ে থাকেন
- পালিয়ে গেলে “অবৈধ” হয়ে যান, ফলে আইনি সুরক্ষা পান না
মানবাধিকার সংস্থা BRAC ও OKUP-এর তথ্য অনুযায়ী-
- নির্যাতনের শিকার হয়ে পালিয়ে যাওয়া নারীরা আশ্রয় না পেয়ে ভিক্ষাবৃত্তি, চুরি বা অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ছেন
- পাসপোর্ট ও মোবাইল ফোন জব্দ থাকায় তারা কোনো সহায়তা চাইতে পারেন না
- কিছু নারীকে জোর করে অন্য বাড়িতে পাঠানো হয়, যেখানে তারা শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হন
- আশ্রয়কেন্দ্রে জায়গা না পেলে তারা রাস্তায় ঘুরে বেড়ান, যা স্থানীয় প্রশাসনের চোখে অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়
বাংলাদেশ সরকারের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে-
- ২০২৪ সালে ১,৩০০ নারী শ্রমিক সৌদি থেকে ফিরে এসেছেন, যাদের অধিকাংশই নির্যাতনের শিকার
- ৪৮ জনের মরদেহ দেশে ফেরত এসেছে, যার মধ্যে আত্মহত্যার ঘটনাও রয়েছে
- নতুন করে গৃহকর্মী পাঠানোর বিষয়ে নীতিগত পর্যালোচনা চলছে, তবে এখনো নিষেধাজ্ঞা জারি হয়নি
কী করা উচিত?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন-
- দালালদের নিয়ন্ত্রণ ও লাইসেন্সবিহীন রিক্রুটিং বন্ধ করতে হবে
- নারী শ্রমিকদের জন্য বাধ্যতামূলক প্রশিক্ষণ ও চুক্তি যাচাই ব্যবস্থা চালু করতে হবে
- দূতাবাসে আশ্রয়কেন্দ্র ও আইনি সহায়তা জোরদার করতে হবে
- কাফালা ব্যবস্থার সংস্কার ও আন্তর্জাতিক চুক্তির মাধ্যমে সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে
এই পরিস্থিতি শুধু মানবাধিকার লঙ্ঘনের নয়, বরং বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি ও অভিবাসন নীতির জন্যও বড় চ্যালেঞ্জ।
মাইগ্রেশন কনসার্ন রিপোর্ট