Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

২০২৪ সালে ফ্রান্সে কমেছে বাংলাদেশিদের আশ্রয় আবেদনের সংখ্যা

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৯ জুন ২০২৫, ০৯:১৯

২০২৪ সালে ফ্রান্সে কমেছে বাংলাদেশিদের আশ্রয় আবেদনের সংখ্যা

২০২৪ সালে ফ্রান্সে বাংলাদেশিদের আশ্রয় আবেদন উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। শরণার্থী ও রাষ্ট্রহীন ব্যক্তিদের সুরক্ষার জন্য নির্ধারিত ফরাসি দপ্তরের (অফপ্রা) বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।

২০ জুন প্রকাশিত অফপ্রার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর বাংলাদেশ থেকে ফ্রান্সে মোট ৬ হাজার ৯৫১টি আশ্রয় আবেদন প্রথমবারের মতো জমা পড়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ কম। এই হ্রাসের ফলে বাংলাদেশ শীর্ষ পাঁচ আবেদনকারী দেশের তালিকা থেকে ছিটকে পড়েছে।

সর্বোচ্চ আবেদনকারী দেশ হিসেবে আগের বছরের মতো এবারো তালিকার শীর্ষে রয়েছে আফগানিস্তান। ১২ হাজার ৩৭৮টি প্রথম আবেদন নিয়ে টানা সপ্তমবারের মতো সবার ওপরে অবস্থান করছে আফগানরা। তবে তাদের আবেদন সংখ্যাও ২০২৩ সালের তুলনায় ২৯.৫ শতাংশ কমে এসেছে।

দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে ইউক্রেন। দেশটির আবেদন সংখ্যা ১১ হাজার ৮১৪, যা ২০২৩ সালের তুলনায় ২৮৫ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে ইউক্রেনীয়দের ফ্রান্সে আশ্রয় নেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে।

তৃতীয় স্থানে রয়েছে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গিনি, যেখান থেকে ১০ হাজার ৩২৭টি আবেদন জমা পড়েছে। গত বছরের তুলনায় এটি ৪৭.৮ শতাংশ বেশি।

চতুর্থ স্থানে রয়েছে গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র (ডিআর কঙ্গো)। দেশটির আশ্রয়প্রার্থীরা ফ্রান্সে ৯ হাজার ৪৮১টি আবেদন জমা করেছেন, যা আগের বছরের চেয়ে ২২.৩ শতাংশ বেশি।

পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে আইভরি কোস্ট। যেখান থেকে ৮ হাজার ৮৫১টি আবেদন জমা পড়েছে। এ সংখ্যাও ২০ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।

এদিকে তুরস্কের আবেদন সংখ্যা ৩০ শতাংশ হ্রাস পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৬,০৩১-এ। ৬ হাজার ৯৫১টি আবেদন নিয়ে বাংলাদেশি আবেদনকারীদের অবস্থান এসেছে ষষ্ঠ অবস্থানে। 

২০২৩ সালে মোট ৮ হাজার ৬০০ জন বাংলাদেশি প্রথমবারের মতো ফ্রান্সে আশ্রয় আবেদন করেছিলেন। ২০২২ সালেও দ্বিতীয় শীর্ষ আবেদনকারী ছিল বাংলাদেশিরা। 

গত বছরের শুরুতে লো মোন্দ এবং রেডিও ফ্রান্স ইন্টারন্যাশনালসহ ফরাসি গণমাধ্যমগুলো বাংলাদেশে শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী শাসন ব্যবস্থার ফলে আশ্রয়প্রার্থী বৃদ্ধির ব্যাপারে প্রতিবেদন ছাপিয়েছিল। এছাড়া দারিদ্র্য এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মতো কারণগুলোও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আশ্রয়প্রার্থী বৃদ্ধির পেছনে যুক্ত ছিল।  

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্রদের গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে। তবে বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত দল আওয়ামী সরকারের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করায় সেটির প্রভাব ইউরোপ এবং ফ্রান্সের আশ্রয় ব্যবস্থায় পড়বে কিনা সেটি আগামী বছরের পরিসংখ্যানে বোঝা যাবে। 

চমকপ্রদভাবে তালিকায় ঢুকে পড়েছে ক্যারিবীয় দেশ হাইতি, যাদের আবেদন সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়ে হয়েছে ৫ হাজার ৭৪৬। হাইতির চলমান রাজনৈতিক সহিংসতা ও বিশৃঙ্খলার প্রেক্ষাপটে এ পরিবর্তন ঘটেছে।

জর্জিয়া থেকে আসা আবেদনকারীদের সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৩৯৫, যা ৪৫.১ শতাংশ হ্রাসের ইঙ্গিত দেয়। দেশটির ‘নিরাপদ দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার ফলে আবেদন সংখ্যায় এই বড় পতন দেখা গেছে।

দশম স্থানে রয়েছে আফ্রিকার দেশ সুদান। যেখান থেকে ৪ হাজার ৯২৭টি প্রথমবারের মতো আবেদন জমা পড়েছে। দেশটিতে চলমান সংঘাতের কারণে আশ্রয়প্রার্থীদের সংখ্যা এক বছরে ৫৯.২ শতাংশ বেড়ে গেছে।

আশ্রয় পাওয়ার হার কম

২০২৪ সালে ফ্রান্সে মোট ১ লাখ ৫৩ হাজার ৭১৫টি আশ্রয় আবেদন জমা পড়েছে (রিএক্সামা বা পুনঃআবেদনসহ), যা ২০২৩ সালের তুলনায় ৭.৮ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে ১ লাখ ৩০ হাজার ২৯টি ছিল প্রথমবারের মতো আবেদন এবং ২৩ হাজার ৫৭৩টি পুনঃআবেদন বা রিএক্সামা।

এ বছর আশ্রয়প্রার্থীদের গড় সুরক্ষা প্রদানের হার ছিল প্রায় ৩৯ শতাংশ। বিশেষ করে আফগান নারীদের জন্য সুরক্ষা প্রাপ্তির হার ৯৮ শতাংশের কাছাকাছি।

বাংলাদেশি নাগরিকদের ক্ষেত্রে চিত্রটি ছিল একেবারেই ভিন্ন। বিপুলসংখ্যক আবেদন সত্ত্বেও মাত্র ৪৫৩ জন বাংলাদেশিকে শরণার্থী মর্যাদা (রিফিউজি স্ট্যাটাস) এবং ১৬৫ জনকে অস্থায়ী সুরক্ষা (সাবসিডিয়ারি প্রটেকশন) দেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে, ৬ হাজার ৭৮৯টি আবেদন অফপ্রা প্রত্যাখ্যান করেছে। অর্থাৎ, বাংলাদেশিদের সুরক্ষা পাওয়ার হার মাত্র ৮,৩৪ শতাংশ, যা সামগ্রিক গড় হারের তুলনায় অনেক কম।

যদিও আবেদন প্রত্যাখ্যাত হলে আবেদনকারীরা ফ্রান্সের জাতীয় আশ্রয় আদালত (সিএনডিএ)-তে আপিল করতে পারেন।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আদালত বহু আবেদন শুনানির সুযোগ না দিয়েই সরাসরি প্রত্যাখ্যান করছে। এতে করে বাংলাদেশি আবেদনকারীদের আশ্রয় পাওয়ার পথ আরো কঠিন হয়ে উঠছে।

তথ্যসূত্র: ইনফো মাইগ্রেন্টস

Logo