Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

দক্ষতার ঘাটতি: বিদেশে কর্মী পাঠানো কম, বাড়ছে বেকারত্ব

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৯ জুন ২০২৫, ০৯:১৪

দক্ষতার ঘাটতি: বিদেশে কর্মী পাঠানো কম, বাড়ছে বেকারত্ব

বাংলাদেশের শ্রমবাজারে প্রতি বছর গড়ে ২২ লাখ নতুন মানুষ প্রবেশ করলেও এর বিপরীতে মাত্র ১.৯ শতাংশ পাচ্ছেন যথাযথ দক্ষতা প্রশিক্ষণ, যা উদ্বেগজনকভাবে কম। এই প্রবণতা এখন দেশের বেকারত্ব পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলছে এবং একই সঙ্গে বিদেশি শ্রমবাজারে প্রতিযোগিতা হারিয়ে ফেলছে বাংলাদেশ।

সরকারি ও গবেষণা সংস্থাগুলোর তথ্য বলছে, দেশের অধিকাংশ কর্মসংস্থানের উৎস এখন প্রবাসী শ্রমবাজার হলেও দক্ষতার অভাবে বাংলাদেশ তার পুরোনো শক্ত অবস্থান হারাতে বসেছে। তেলসমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যসহ এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলো এখন অগ্রাধিকার দিচ্ছে দক্ষ ও আধা-দক্ষ কর্মীকে, যাদের রয়েছে নির্দিষ্ট কাজে প্রশিক্ষণ ও আন্তর্জাতিক মানের সনদ।

অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে পাঠানো কর্মীদের একটি বড় অংশই এখনো গৃহকর্মী, নির্মাণ শ্রমিক, নিরাপত্তাকর্মী ও সাধারণ পরিষেবাকর্মী হিসেবে কাজ করেন; যারা খুব কম পরিমাণ আয় করেন এবং অনেক ক্ষেত্রেই হয়রানির শিকার হন। অথচ ইলেকট্রিশিয়ান, প্লাম্বার, ওয়েল্ডার, রোবটিক টেকনিশিয়ান, হেলথ কেয়ার অ্যাসিস্ট্যান্টের মতো খাতে চাহিদা দ্রুত বাড়ছে, যেখানে বাংলাদেশের সরবরাহ নগণ্য।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (BIDS)-এর এক গবেষণায় দেখা গেছে, দক্ষতা না থাকায় একজন বিদেশগামী শ্রমিক বছরে গড় আয় করেন প্রায় ৪০% কম, যাদের রয়েছে কারিগরি প্রশিক্ষণ বা লাইসেন্স।

প্রশিক্ষণ খাতে বিনিয়োগ অথচ ফলাফল সীমিত

সরকার প্রতি বছর প্রচুর অর্থ বরাদ্দ দিলেও বেশির ভাগ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রেই আধুনিক যন্ত্রপাতি, যোগ্য প্রশিক্ষক ও বাস্তবমুখী কোর্সের ঘাটতি রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, অনেক প্রতিষ্ঠানে এখনো ব্যবহার করা হচ্ছে ২০ বছরের পুরোনো সিলেবাস, যা বর্তমান শ্রমবাজারের সাথে অপ্রাসঙ্গিক। ফলে প্রশিক্ষণ নিয়ে বহু মানুষ বিদেশ যাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে পারছেন না।

এদিকে, বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম মূল চালিকা শক্তি প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) ২০২৩ ও ২০২৪ অর্থবছরে ধারাবাহিকভাবে কমেছে, যার অন্যতম প্রধান কারণ হলো কাজ হারানো ও চুক্তির মেয়াদ শেষে ফিরে আসা অদক্ষ কর্মীদের পুনরায় কাজ না পাওয়া।

জাতীয় কর্মসংস্থান কাঠামোতে ভাঙন

দেশীয় শ্রমবাজারেও সমস্যা প্রকট। মেগা প্রকল্প, গার্মেন্টস, কন্সট্রাকশন, আইটি এবং স্বাস্থ্যসেবা খাতে দক্ষ কর্মীর তীব্র ঘাটতি রয়েছে। অথচ বিপরীতে শিক্ষিত তরুণদের একটি বড় অংশ দিন দিন বেকার হয়ে পড়ছেন। কারণ তাদের দক্ষতা বাজারের চাহিদার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, শিক্ষিত বেকারত্বের হার ১২% ছাড়িয়ে গেছে, যেখানে অদক্ষ ও কম শিক্ষিত কর্মীদের মধ্যেও কর্মসংস্থানের হার কমছে।

কী করা প্রয়োজন?

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সংকট থেকে উত্তরণে দরকার কৌশলগত ও যুগোপযোগী পরিকল্পনা। তারা সুপারিশ করছেন-

কারিগরি শিক্ষাকে মূল ধারায় আনা, যেমন এসএসসি পাস শিক্ষার্থীদের বাধ্যতামূলক টেকনিক্যাল ট্র্যাক

বিদেশি শ্রমবাজার বিশ্লেষণ করে দেশভিত্তিক দক্ষতা উন্নয়ন কোর্স তৈরি

বেসরকারি খাত ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পার্টনারশিপে ইন-ডিমান্ড ট্রেনিং মডিউল চালু

রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জন্য রি-স্কিলিং ও আপ-স্কিলিং প্রোগ্রাম চালু

জেলায় জেলায় আধুনিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সনদ প্রদান

দেশের বৃহৎ যুব জনগোষ্ঠীকে যদি সময়মতো দক্ষ করে আন্তর্জাতিক মানে প্রস্তুত করা না যায়, তাহলে তা হবে একটি ঐতিহাসিক সুযোগ হারানোর মতো। শুধুই কর্মসংস্থান নয়, এই দক্ষতা নির্ধারণ করবে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ বৈশ্বিক শ্রমবাজারে কতটা প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারবে।

মাইগ্রেশন কনসার্ন রিপোর্ট

Logo