Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

কেন দেশ ছাড়তে মরিয়া বাংলাদেশিরা?

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২১ জুন ২০২৫, ১২:১৩

কেন দেশ ছাড়তে মরিয়া বাংলাদেশিরা?

গত পাঁচ বছরে (২০২০-২০২৪) বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের নাগরিকদের আশ্রয় চাওয়ার হার ক্রমেই বাড়ছে। জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার (UNHCR) রেজিস্ট্রেশন তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ২৮,৪৭৩ জন বাংলাদেশি শরণার্থী হিসেবে নিবন্ধিত হন, যা ২০২৩ সালের ২৪,১২৬ জনের তুলনায় বেশি। একই সময়ে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদনকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১,০৮,১৩১; যা গত বছরের (৭৫,৮৬৭) চেয়ে প্রায় ৪০ % বৃদ্ধি পেয়েছে ।

ইউরোপ, উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা, এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশের বিভিন্ন দেশেই বাংলাদেশের এই আশ্রয়প্রার্থীরা নিবন্ধিত হয়েছেন। ইউরোপে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, ফিনল্যান্ড, জর্জিয়া, সাইপ্রাস ও বসনিয়াসহ অস্ট্রেলিয়ায়; আমেরিকায় যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, বলিভিয়া, কোস্টারিকা, ইকুয়েডর ও পাপুয়া নিউগিনিতে এবং এশিয়ার মধ্যে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, হংকং ও নিউজিল্যান্ডেও বেশ কিছু বাংলাদেশি আশ্রয়প্রার্থীরূপে রয়েছেন। এমনকি ২০২৪ সালে পূর্ব আফ্রিকার সোমালিয়াতেও ছয় বাংলাদেশির শরণার্থী হিসেবে নিবন্ধন পাওয়া যায়।

এই প্রবণতার পেছনে সবচেয়ে দৃশ্যমান কারণ হিসেবে রয়েছে অর্থনৈতিক দুর্দশা ও কর্মসংস্থান সংকট। করোনা পরবর্তী সময়ে দেশের মধ্যে আয়ের সুযোগ হ্রাস পেয়েছে এবং বৈধভাবে বিদেশে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ায় অনেকে অবৈধ পথে ঝুঁকিপূর্ণ রুট বেছে নিচ্ছেন।

আরেকটি বড় কারণ হলো রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তাহীনতা। রাজনৈতিক ভীতি, আন্দোলন দমন ও হত্যাকাণ্ড সৃষ্টি করে, যা অনেকেই স্থায়ী আশ্রয়ের পথ হিসেবে বিদেশে পাড়ি দিতে বাধ্য করছে। এই পরিস্থিতিতেই অনেকে রাজনৈতিক নির্যাতন ও নিরাপত্তাহীনতার আশ্রয়ে ইউরোপ ও আমেরিকায় আশ্রয় চান, যদিও সব সময়ই তারা প্রকৃত নির্যাতিত নাও হতে পারে।

তৃতীয়ত, মানব পাচারের ভয়ংকর রুটের ব্যবহার চলছে। ভূমধ্যসাগর, লিবিয়া ও ইতালির উপকূল দিয়ে যাত্রীদের নৌকা পারাপারসহ ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধেও পাচারকারীরা বাংলাদেশের নাগরিকদের উচ্চ ঝুঁকিতে পাঠাচ্ছেন। অনেক সময় স্থানের বদলে যুদ্ধক্ষেত্রে অংশগ্রহণ করানো হচ্ছে।

পরিশেষে সামাজিক এবং ডিজিটাল বিভ্রান্তি গুরুত্বপূর্ণ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও কথিত “সফল অভিজ্ঞতার” গল্পগুলো বিদেশজীবনের স্বপ্ন দেখিয়ে, অনেকে ঝুঁকিপূর্ণ পদক্ষেপ নিচ্ছেন। বাস্তবতার দেখা পেলে কেউ কেউ নিজের ভবিষ্যৎ রক্ষা করতে নিরাপদ আশ্রয় খোঁজেন।

এসব জটিল কারণ একত্রে মানুষকে বৈধ পথে না থেকে বিপজ্জনক, অবৈধভাবে দেশ ছাড়ার পথ বেছে নিতে বাধ্য করছে। বাংলাদেশের নাগরিকরা যখন আশ্রয়প্রার্থীরূপে বিদেশে রেজিস্ট্রেশন করছেন, তখন তাদের অধিকাংশই হয় অর্থনৈতিক উন্নতি ও নিরাপত্তার আশা খুঁজছেন, আবার কেউ কেউ সত্যিই রাজনৈতিক নিপীড়নের শিকার।

বিশ্বব্যাপী এই প্রবণতা প্রতিরোধ করতে প্রয়োজন দেশের ভেতরে অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবন, রাজনৈতিক সহনশীলতা এবং বৈধ অভিবাসন রুটের সম্প্রসারণ। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে মানব পাচার বন্ধ ও নিরাপদ আশ্রয় নিশ্চিতকরণে UNHCR ও অন্যান্য সংস্থার ভূমিকা অত্যাবশ্যক।

মাইগ্রেশন কনসার্ন রিপোর্ট 

Logo