
১৯৭১ সাল বিশ্ব ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ বছর, যখন দুইটি ভিন্ন ভৌগোলিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে অবস্থিত দেশ বাংলাদেশ ও বাহরাইন নিজ নিজ স্বাধীনতা অর্জন করে। এই যুগান্তকারী ঘটনাগুলো শুধু তাদের নিজস্ব জাতীয় ইতিহাসে নয়, বরং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও গভীর প্রভাব ফেলেছে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস এক রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের ফল।১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়, যা ৯ মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের সূচনা করে। এই যুদ্ধে প্রায় ৩০ লাখ মানুষ প্রাণ হারায় এবং ২ কোটি মানুষ উদ্বাস্তু হয়। ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের মাধ্যমে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
বাহরাইনের স্বাধীনতা: কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে মুক্তি
বাহরাইন দীর্ঘদিন ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসনের অধীনে ছিল। ১৯৬৮ সালে ব্রিটেন পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে তাদের প্রতিরক্ষা চুক্তি সমাপ্তির ঘোষণা দেয়। এরপর ১৯৭০ সালে জাতিসংঘের একটি জরিপে বাহরাইনের জনগণ স্বাধীনতার পক্ষে মত দেয়। ফলে ১৯৭১ সালের ১৫ আগস্ট বাহরাইন ব্রিটেনের সঙ্গে একটি বন্ধুত্ব চুক্তি স্বাক্ষর করে এবং স্বাধীনতা লাভ করে। যদিও ১৫ আগস্ট বাহরাইনের প্রকৃত স্বাধীনতা দিবস, তবে তারা ১৬ ডিসেম্বরকে জাতীয় দিবস হিসেবে উদযাপন করে, যা আমির ঈসা বিন সালমান আল খলিফার সিংহাসনে আরোহণের দিন।
বাংলাদেশ-বাহরাইন সম্পর্ক: বন্ধুত্বের ৫০ বছর
বাংলাদেশ ও বাহরাইনের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয় ১৯৭৪ সালে, যখন বাহরাইন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। ১৯৮৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ বাহরাইনে নিজস্ব দূতাবাস স্থাপন করে। এই সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ২০২৪ সালে মানামায় একটি বিশেষ অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়, যেখানে উভয় দেশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেন ।
প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিক: অর্থনৈতিক সম্পর্কের মেরুদণ্ড
বাহরাইনে প্রায় বর্তমানে ১লাখ ৪০হাজার বাংলাদেশি প্রবাসী শ্রমিক কাজ করছেন, যারা দেশটির অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। তবে কিছু সময়ে শ্রমিকদের অধিকার লঙ্ঘন, মজুরি বঞ্চনা এবং ভিসা সংক্রান্ত সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে।
ভবিষ্যতের দিগন্ত: সহযোগিতার নতুন সুযোগ
বাংলাদেশ ও বাহরাইন উভয়ই নিজেদের জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা "স্মার্ট বাংলাদেশ ২০৪১" এবং "বাহরাইন ইকোনমিক ভিশন ২০৩০" বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই লক্ষ্যে তারা বাণিজ্য, বিনিয়োগ, শিক্ষা ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে ।
বাংলাদেশ ও বাহরাইন উভয়ই ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জন করেছে, যেখানে বাংলাদেশ ২৬ মার্চ এবং বাহরাইন ১৫ আগস্ট। এই সমাপতন দুই দেশের মধ্যে একটি বিশেষ বন্ধনের সৃষ্টি করেছে, যা ভবিষ্যতে আরো গভীর ও বিস্তৃত সম্পর্কের ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে।
মাইগ্রেশন কনসার্ন রিপোর্ট