
২০১৫ সালে ১০টি জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়েছিল মালয়েশিয়া, যা সিন্ডিকেট নামে পরিচিতি পায়। পরে জিটুজি প্লাস নামের এই পদ্ধতিতে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ বন্ধ করে দেয় দেশটি।
এরপর দুই দেশের মধ্যে অনেক আলোচনার পর ২০২২ সালের আগস্টে আবার শ্রমবাজার খুলে দেওয়া হয়। সব এজেন্সির জন্য উন্মুক্ত রাখার আন্দোলন হলেও তা করা হয়নি শেষ পর্যন্ত। প্রথমে ২৫ এজেন্সি দায়িত্ব পেলেও পরে এটি বাড়িয়ে ১০০ এজেন্সি করা হয়। এই চক্রের সহায়তাকারী হিসেবে মালয়েশিয়াতেও বেসরকারি এজেন্সির একটি চক্র গঠে ওঠার অভিযোগ রয়েছে।
অভিবাসন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার কখনোই স্থিতিশীল ছিল না। ১৯৯২ সালে প্রথম আনুষ্ঠানিক চুক্তির কয়েক বছর পর সেটি বন্ধ হয়ে যায়। পরে ১৯৯৬ সালে আবার সে দেশের শ্রমবাজার চালু হয়।
এরপর ২০০০ সালে নিজেদের চাহিদা বিবেচনায় সে দেশের সরকার বিশেষ অনুমোদনের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগের অনুমতি দেয়।
২০০৬ সালে আবারো কর্মী পাঠানো শুরু করে বাংলাদেশ। কিন্তু বিপুল সংখ্যক অবৈধ বাংলাদেশি ধরা পড়ার পর ২০০৯ সালে মালয়েশিয়ায় শ্রমবাজারে বাংলাদেশকে নিষিদ্ধ করা হয়।
এরপর দুই দেশের মধ্যে আলোচনার পর ২০১২ সালে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে আবার নতুন চুক্তি হয়। ওই বছরের নভেম্বর মাসে দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত 'জিটুজি' পদ্ধতিতে কর্মী নিয়োগ সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারকের ভিত্তিতে ২০১৩ সালের এপ্রিল মাস থেকে আবার বাংলাদেশি কর্মীরা মালয়েশিয়া যাওয়া শুরু করে।
২০১৫ সালে ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেয় মালয়েশিয়া, যা সিন্ডিকেট নামে পরিচিতি পায়।
কিন্তু কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যসহ নানা অভিযোগে ২০১৮ সালে সেটিও বন্ধ করে মাহাথির মোহাম্মদের সরকার।
২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশের সাথে মালয়েশিয়ার সরকার কর্মী প্রেরণ বিষয়ক একটি সমঝোতা স্মারক সই করে। তবে তারপরও কর্মী নিয়োগ বন্ধ ছিল।
কারণ মালয়েশিয়ার তরফ থেকে শুধু ২৫টি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী নেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
বাংলাদেশের এজেন্সিগুলো এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে। বাংলাদেশের সরকারও বিষয়টি নিয়ে দ্বিমত জানায়।
এরপর থেকে ছয় মাস ধরে দুই দেশের সরকারের মধ্যে শুধু চিঠি চালাচালি হয় এবং যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক বারবার মালয়েশিয়ার তরফ থেকে পিছিয়ে দেওয়া হয়।
ওই বছরের জুন মাসের দুই তারিখ বাংলাদেশের তৎকালীন প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমদ এবং মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী এম সারাভানানের উপস্থিতিতে ঢাকায় দুই দেশের একটি যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে বিষয়টির এক ধরনের সুরাহা হয়।
বাংলাদেশ সরকার সে সময় ১৫৬১ বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির তালিকা পাঠায়। সেখান থেকে মালয়েশিয়া সরকার তাদের কেবিনেটে ১০১ এজেন্সির নাম অনুমোদন করে।
২০২১ সালে একটি সমঝোতা চুক্তির আওতায় মালয়েশিয়ার ঠিক করে দেওয়া ১০২টি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে দেশটিতে কর্মী নিয়োগ শুরু হয়। ২০২৪ সালের ৩১ মে বাংলাদেশের জন্য আবারো বন্ধ হয় বাজারটি। মালয়েশিয়া যেতে পারলেও অনেক কর্মী নির্ধারিত কাজে যোগ দিতে পারেননি এমন অভিযোগও উঠেছিল সেবার।
তথ্যসূত্র: বিবিসি বাংলা