
বাংলাদেশ ১৯৮৮ সাল থেকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ করে আসছে এবং বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে স্বীকৃত। বাংলাদেশের সেনাবাহিনী, পুলিশ ও বেসামরিক সদস্যরা বিভিন্ন যুদ্ধবিধ্বস্ত ও সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠা, মানবাধিকার সুরক্ষা এবং টেকসই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।
বিশ্ব শান্তি রক্ষার এ যাত্রায় ৩৫ বছরে জীবন দিয়েছেন ১৬৮ বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী। আহত হয়েছেন অন্তত ২৫৭ জন। পেশাদারিত্বের মাধ্যমে শান্তি রক্ষা মিশনে সৈন্য প্রেরণকারী শীর্ষ দেশগুলোর তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ। বর্তমানে বাংলাদেশ তৃতীয় শীর্ষ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ।
বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় ৭ হাজার শান্তিরক্ষী সদস্য ১০টি শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়োজিত আছেন। এই মিশনগুলোতে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা অস্ত্রবিরতি পর্যবেক্ষণ, মানবিক সহায়তা প্রদান, শরণার্থী ও বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের সহায়তা, স্থানীয় নিরাপত্তা বাহিনীকে প্রশিক্ষণ এবং অবকাঠামো উন্নয়নসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন।
২০২৫ সালের মে মাস পর্যন্ত বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর সদস্যরা যে ৮টি দেশে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়োজিত রয়েছেন, সে দেশগুলো হলো আবেই (সুদান ও দক্ষিণ সুদানের মধ্যবর্তী অঞ্চল), মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, সাইপ্রাস, ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো, লেবানন, দক্ষিণ সুদান, পশ্চিম সাহারা, ইয়েমেন। এছাড়া বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা জাতিসংঘ সদর দপ্তরসহ অন্যান্য স্থানে দায়িত্ব পালন করছেন।
কী ধরনের কাজ করছেন শান্তিরক্ষীরা?
- বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন, যেমন:
- নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ: যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলে শান্তি বজায় রাখা ও অস্ত্রবিরতি পর্যবেক্ষণ।
- মানবিক সহায়তা: শরণার্থী ও বাস্তুচ্যুত জনগণের সহায়তা প্রদান।
- পুনর্গঠন কার্যক্রম: স্কুল, হাসপাতাল, রাস্তা ইত্যাদি অবকাঠামো নির্মাণে অংশগ্রহণ।
- প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ: স্থানীয় পুলিশ ও বিচারব্যবস্থাকে প্রশিক্ষণ ও সহায়তা প্রদান।
এই দায়িত্ব পালনের সময় অনেক শান্তিরক্ষী জীবন উৎসর্গ করেছেন। এ পর্যন্ত ১৬৮ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী মিশনে জীবন দিয়েছেন, যা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা ইতিহাসে অন্যতম সর্বোচ্চ সংখ্যা। শুধু বিশ্বজুড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অনন্য ভূমিকা নয়, এ খাত থেকে অর্জিত হচ্ছে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রাও। ২০০০-০১ অর্থবছর থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী শান্তিরক্ষা মিশন থেকে মোট ২৭ হাজার ৯৪১ কোটি টাকা আয় করেছে । এছাড়া ১৯৮৮ সাল থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত শান্তিরক্ষা মিশন থেকে বাংলাদেশ প্রায় ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা আয় করেছে ।
বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা তাদের পেশাদারিত্ব, শৃঙ্খলা ও মানবিক আচরণের জন্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসিত। তাদের অবদানের ফলে বাংলাদেশ একটি শান্তিপ্রিয়, মানবিক ও দায়িত্বশীল রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বমঞ্চে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সামরিক ও নিরাপত্তাভিত্তিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছে, যা কৌশলগত ও অর্থনৈতিক কূটনীতিতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে ।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ কেবল আর্থিক লাভের দিক থেকেই নয়, বরং জাতীয় মর্যাদা ও গৌরবের ক্ষেত্রেও এক অনন্য মাইলফলক। বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের ত্যাগ ও অবদানের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশের সুনাম ও সম্মান বৃদ্ধি পেয়েছে।
মাইগ্রেশন কনসার্ন রিপোর্ট