Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

বহির্বিশ্বে সীমিত হয়ে আসছে বাংলাদেশিদের গন্তব্য

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১২ মে ২০২৫, ১১:০২

বহির্বিশ্বে সীমিত হয়ে আসছে বাংলাদেশিদের গন্তব্য

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য আন্তর্জাতিক ভ্রমণ ক্রমেই জটিল হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন দেশ ভিসা প্রক্রিয়া কঠোর করেছে বা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করেছে, যার ফলে পর্যটন, চিকিৎসা ও কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে বিদেশগমনকারী বাংলাদেশিদের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হয়েছে।

পাসপোর্ট শক্তিমত্তা ও ভিসামুক্ত গন্তব্য

২০২৫ সালের হেনলি পাসপোর্ট সূচক অনুযায়ী, বাংলাদেশি পাসপোর্টের র‍্যাঙ্কিং ৯৩তম। বর্তমানে বাংলাদেশি নাগরিকরা ৩৯টি দেশে ভিসামুক্ত বা অন-অ্যারাইভাল ভিসা সুবিধা ভোগ করতে পারেন।

বাংলাদেশি পাসপোর্টের গ্রহণযোগ্যতা হ্রাসের পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে:

অবৈধ অভিবাসন: অনেক বাংলাদেশি ট্যুরিস্ট ভিসায় গিয়ে অবৈধভাবে অন্য দেশে প্রবেশের চেষ্টা করেছেন, যা গন্তব্য দেশগুলোর মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

ভিসা প্রক্রিয়ায় জটিলতা: দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশ ভিসা প্রক্রিয়া কঠোর করেছে বা স্থগিত করেছে, যার ফলে বৈধ ভ্রমণকারীদের জন্যও সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।

পাসপোর্ট সূচকে অবনতি: হেনলি ও নোমাড সূচকে বাংলাদেশের নিম্নমুখী অবস্থান আন্তর্জাতিক ভ্রমণে সীমাবদ্ধতা সৃষ্টি করছে।

ভিসা নিষেধাজ্ঞা ও সীমাবদ্ধতা

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া:

ভিয়েতনাম: ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে বাংলাদেশিদের জন্য ট্যুরিস্ট ভিসা স্থগিত করেছে। এর প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, অনেক বাংলাদেশি ট্যুরিস্ট ভিসায় গিয়ে অবৈধভাবে অন্য দেশে প্রবেশের চেষ্টা করেছেন।

মালয়েশিয়া: ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে শ্রমিক ভিসা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে পর্যটন ও শিক্ষার্থী ভিসা এখনো চালু রয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্য: সংযুক্ত আরব আমিরাত (UAE): ২০২২ সালের নভেম্বর থেকে বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা ইস্যু সীমিত করা হয়েছে। বর্তমানে দিনে মাত্র ৩০ থেকে ৫০টি ভিসা ইস্যু করা হচ্ছে।

সৌদি আরব: ২০২৫ সালের হজ মৌসুমের আগে বাংলাদেশসহ ১৩টি দেশের জন্য অস্থায়ীভাবে ভিসা স্থগিত করা হয়েছে। এটি উমরাহ, ব্যবসা ও পারিবারিক ভিসার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

ভারত: ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে ভারত বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা প্রক্রিয়া কঠোর করেছে। বর্তমানে শুধুমাত্র জরুরি চিকিৎসা ও মানবিক কারণে সীমিত সংখ্যক ভিসা ইস্যু করা হচ্ছে।

কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য। উদাহরণস্বরূপ, সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে আলোচনা করে সীমিত পরিসরে ভিসা চালু করা হয়েছে।

সুপারিশ ও করণীয়

বিদেশগামীদের সচেতনতা বৃদ্ধি: ভিসা প্রক্রিয়া সম্পর্কে সঠিক তথ্য প্রদান ও ভিসার অপব্যবহার রোধে সচেতনতা কার্যক্রম চালানো।

কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার: ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে কূটনৈতিক আলোচনা ও সম্পর্ক উন্নয়ন।

বিকল্প গন্তব্য অনুসন্ধান: যেসব দেশে ভিসা প্রক্রিয়া সহজ, যেমন মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা ও তুরস্ক; সেসব দেশে ভ্রমণ উৎসাহিত করা।

বাংলাদেশিদের আন্তর্জাতিক ভ্রমণে ভিসা সংকট একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সংকট মোকাবিলায় সরকার, ভ্রমণ সংস্থা ও নাগরিকদের সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। সচেতনতা বৃদ্ধি, কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়ন ও বিকল্প গন্তব্য অনুসন্ধানের মাধ্যমে এই সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।

তথ্যসূত্র: দৈনিক বণিক বার্তা

Logo