২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহিংসতায় নতুন করে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বাংলাদেশে প্রবেশের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই অনুপ্রবেশের ফলে সীমান্ত অঞ্চলে মানবিক সংকট তীব্রতর হয়েছে। বাংলাদেশের সীমান্তে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ফলে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে নিরাপত্তা উদ্বেগ বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারতীয় কর্মকর্তারা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন।

মাদক উৎপাদনের কেন্দ্র শান রাজ্য:

মিয়ানমারের শান রাজ্য বর্তমানে ইয়াবা, আইস এবং হেরোইনের প্রধান উৎপাদন কেন্দ্র। দ্য ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, শান রাজ্যে প্রায় ৫০টি মাদক কারখানা রয়েছে, যেখানে ইয়াবা ও আইস উৎপাদিত হয়। এই অঞ্চলের পাহাড়ি এলাকায় পপি ফুল চাষ করে হেরোইন উৎপাদন করা হয়।

বাংলাদেশে মাদক পাচার:

বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলো, বিশেষ করে টেকনাফ ও নাইক্ষ্যংছড়ি মাদক পাচারের প্রধান রুট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ২০২৪ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড শাহপরীর দ্বীপ থেকে প্রায় ১ কেজি ক্রিস্টাল মেথ জব্দ করে, যার বাজারমূল্য প্রায় ৫ কোটি টাকা। এর আগে আগস্ট মাসে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) টেকনাফ ও নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে প্রায় ২১ কোটি টাকার ইয়াবা ও আইস জব্দ করে ।

আরাকান আর্মির ভূমিকা: 

রাখাইন রাজ্যের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (AA) বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে মাদক পাচারে জড়িত বলে অভিযোগ আছে। বাংলাদেশি শ্রমিকরা জানিয়েছেন, তারা প্রতিটি মাদক পরিবহনের জন্য ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত পারিশ্রমিক পাচ্ছেন। 

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সম্পৃক্ততা: 

আরাকান আর্মি সম্প্রতি চারজন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে নাফ নদী পার হয়ে মাদক পাচারের অভিযোগে আটক করেছে। এই ঘটনা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মাদক পাচারে জড়িত থাকার আশঙ্কা বাড়িয়েছে।

বাংলাদেশ সরকার মাদক পাচার রোধে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যার মধ্যে সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অন্তর্ভুক্ত। জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ বিষয়ক অফিস (UNODC) এবং BIMSTEC-এর সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। সরকার আশা করছে এর মাধ্যমে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সংগঠিত অপরাধ মোকাবিলা সহজ হবে।

মাইগ্রেশন কনসার্ন রিপোর্ট