
বাংলাদেশের নারী অভিবাসীর সংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনি অনেকে ফেরতও আসছেন। কর্তৃপক্ষের যথাযথ নজরদারির অভাবে বিদেশে গিয়ে অনেকেই যৌন হয়রানি, নিপীড়ন ও মজুরি বৈষম্যের শিকার হন। টেকসই উন্নয়ন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের জন্য নারী অভিবাসী কর্মীদের ক্ষমতায়ন এবং তাদের অধিকার রক্ষা অপরিহার্য। এ ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বিত কাজ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করা সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা।
৭ মে রাজধানীর একটি হোটেলে ‘টুগেদার উই অল: প্রটেক্টিং রাইটস অ্যান্ড এমপাওয়ারিং উইমেন মাইগ্র্যান্টস’ শীর্ষক এক কর্মশালায় এমন অভিমত উঠে আসে। বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম এ কর্মশালার আয়োজন করে। নারী অভিবাসীদের অধিকার সুরক্ষা ও ক্ষমতায়নে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে প্রযুক্তিগত, আইনি ও আর্থিক সহায়তা প্রদানকারী অংশীজনদের একত্র করে অভিবাসীদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন মো. মুশফিকুর রহমান বলেন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন এবং দারিদ্র্য বিমোচন করাই লক্ষ্য। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা হলো নারী উদ্যোক্তা ও নারীর ক্ষমতায়ন। যারা বিদেশ থেকে আসেন, তাদের বেশির ভাগেরই দক্ষতা থাকে না। এসএমই ফাউন্ডেশন বিদেশফেরত নারীদের উদ্যোক্তা তৈরি, প্রশিক্ষণ ও অর্থসহায়তার জন্য কাজ করবে।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, অভিবাসী পাঠানো দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ষষ্ঠ। বর্তমানে এক কোটির বেশি বাংলাদেশি অভিবাসী হিসেবে বিদেশে অবস্থান করছেন। এর মধ্যে নারীর সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। বাংলাদেশের অধিকাংশ নারীই মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন অনুবিভাগ) মো. সাইফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘নারীরা পরিবার থেকে শুরু করে নানাভাবে সহিংসতার শিকার। বিদেশে নারীরা যেন বিপদে না পড়েন, সে জন্য অভিবাসনকে নিরাপদ করতে হবে। পাশাপাশি বিদেশফেরত নারীদের জন্য বিমানবন্দরে সেবা থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রে সেবার মান বাড়াতে কাজ করছে সরকার। কর্মশালা, সেমিনারে বেশি না করে পরিপূর্ণ কিছু করতে হবে। তারপর দরকার বিনিয়োগ।’
প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ও ওয়েজ আর্নার্স ওয়েলফেয়ার বোর্ডের রাইজ প্রকল্পের পরিচালক এ টি এম মাহবুব-উল-করিম বলেন, বিদেশফেরত প্রায় ৩১ হাজার নারীকে সরকার চিহ্নিত করে সেবা দিয়েছে। এই কাজ চলমান।
বেসরকারি সংস্থা মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, ‘আমরা এখনো শুনি এই নারীরা অদক্ষ বা কিছুটা দক্ষ। অদক্ষ কর্মীকে কেনই বা পাঠাব। অদক্ষ অবস্থায় বিদেশে গিয়ে ওরা কোনো আলোচনা বা বেতন নিয়ে দর–কষাকষিও করতে পারে না। অভিবাসীরা তো শুধু রেমিট্যান্স মেশিন না। তাই নারীর অভিবাসনকে নিরাপদ ও ফেরার পর সহায়তা দিতে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গড়তে হবে।’
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধে ব্র্যাকের সহযোগী পরিচালক (মাইগ্রেশন অ্যান্ড ইয়ুথ প্ল্যাটফর্ম) শরিফুল হাসান বলেন, বাংলাদেশের প্রায় ১০ লাখ নারী এখন বিদেশ আছেন। গত ছয় বছরে ৬৭ হাজারের বেশি নারী নানা সংকটে পড়ে দেশে ফিরতে বাধ্য হয়েছেন। এদের অনেকেই নিপীড়নের শিকার। বিদেশফেরত নারীদের সবাই মিলে যেন সেবা দিতে পারি, সে জন্য ‘নেটওয়ার্ক ফর বাংলাদেশি উইমেন মাইগ্র্যান্টস’ কাজ করবে। প্রতিটি সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা এখানে তার সেবা নিয়ে এগিয়ে আসবে।
রিক্রুটিং এজেন্সি মালিকদের সংগঠন বায়রা (বায়রা) মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী বলেন, ফিলিপাইনের মতো দেশ নিজেদের নারী অভিবাসীদের কোনো সমস্যা হলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়। যে নিয়োগকর্তা নিপীড়ন করেন, তাকে কালো তালিকাভুক্ত করতে হবে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ব্র্যাকের যৌথ উদ্যোগে বাস্তবায়িত ‘ইমপ্রুভড সাসটেইনেবল রিইন্টিগ্রেশন অব বাংলাদেশি রিটার্নি মাইগ্র্যান্টস’ প্রকল্পের আওতায় কর্মশালায় আয়োজন করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বিদেশফেরত বাংলাদেশি নারীদের সহায়তা করতে গড়ে তোলা ব্র্যাকের ‘নেটওয়ার্ক ফর বাংলাদেশি উইমেন মাইগ্র্যান্টস’–এর চেয়ারপারসন শীপা হাফিজা। তিনি বলেন, সবাই মিলে কাজ করলে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবেই। পুরো অভিবাসনব্যবস্থাকে কীভাবে জেন্ডার রেসপনসিভ করা যায়, সেটা ভাবতে হবে।
তথ্যসূত্র: দৈনিক প্রথম আলো