Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

ডলার আরো দুর্বল হলে উপসাগরীয় দেশের রেমিট্যান্সে ভাটা পড়তে পারে

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৪ মে ২০২৫, ১১:০০

ডলার আরো দুর্বল হলে উপসাগরীয় দেশের রেমিট্যান্সে ভাটা পড়তে পারে

ডলারের বিনিময় হার দুর্বল হতে থাকলে উপসাগরীয় দেশগুলোয় কর্মরত প্রবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে সতর্ক করেছেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা। কেননা, সংযুক্ত আরব আমিরাতের দিরহাম ও সৌদি আরবের রিয়ালের মতো অধিকাংশ উপসাগরীয় মুদ্রার বিনিময় হার ডলারের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। এতে প্রবাসীরা দেশে টাকা পাঠিয়ে আগের মতো বিনিময় মূল্য পাচ্ছেন না। 

সাম্প্রতিক সময়ে ট্রাম্প প্রশাসনের বাণিজ্যনীতি ও মার্কিন আর্থিক বাজারে অনিশ্চয়তার কারণে ডলারের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা কিছুটা কমেছে। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, ডলারের এ দুর্বলতা যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে উপসাগরীয় অঞ্চল থেকে বাংলাদেশ, ফিলিপাইন, পাকিস্তান ও মিসরের মতো দেশগুলোয় প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের পরিমাণও কমে যেতে পারে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিষয়টি আরো গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের একটি বড় অংশ আসে রেমিট্যান্স থেকে, যা গ্রামীণ অর্থনীতি ও পারিবারিক ব্যয়ে বড় অবদান রাখে। সাম্প্রতিক সময়ে টাকার মান কমে যাওয়ায় রেমিট্যান্স প্রবাহ স্থিতিশীল রাখা সরকারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

উল্লেখ্য, উপসাগরীয় দেশগুলোর মুদ্রার বিনিময় হার যেহেতু ডলারের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত, তাই ডলার দুর্বল হলে সেগুলোর ক্রয়ক্ষমতাও কমে যায়। ফলে কোনো প্রবাসী যদি মাসে নির্দিষ্টসংখ্যক দিরহাম আয় করেন, তার টাকায় রূপান্তরিত মূল্য আগের তুলনায় কমে যাবে। অর্থাৎ পরিবারগুলো আগের মতো সমপরিমাণ অর্থ হাতে পাবে না।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ডলার দুর্বল হয়ে পড়ার পেছনে রয়েছে দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে মন্থরগতি ও আর্থিক বাজারে আস্থার ঘাটতি। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে ডলার ইনডেক্স প্রায় ৯ শতাংশ কমেছে। শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা ও বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের বিকল্প বাজারে ঝুঁকে পড়াই এর কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।

ডলারের বিনিময় হার দীর্ঘ সময় ধরে কম থাকলে উপসাগরীয় দেশগুলোয় নতুন বিদেশি শ্রমিক আসার হার কমে যেতে পারে। কারণ আয় আগের মতো না থাকলে অনেকেই অন্য দেশে কাজ খুঁজতে পারেন বা দেশে থেকে যেতে পারেন। এতে উপসাগরীয় কোম্পানিগুলোকে শ্রমিক ধরে রাখতে বেশি বেতন দিতে হতে পারে। যদিও এখনো সেটা খুব একটা দেখা যাচ্ছে না।

বাংলাদেশের জন্য বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা জরুরি। কারণ গত দুই দশকে উপসাগরীয় অঞ্চল থেকে বাংলাদেশে বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে। বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ, আমদানি ব্যয় ও অভ্যন্তরীণ ভোগব্যয়ে রেমিট্যান্স গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, সরকার, ব্যাংক ও রেমিট্যান্স সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো একসঙ্গে কাজ করে ভালো রেট নিশ্চিত করা, ডিজিটাল রেমিট্যান্স আরো সহজ করা ও ডলারের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে আনা এখন সময়ের দাবি।

তবে এখন পর্যন্ত রেমিট্যান্স খাত স্থিতিশীল রয়েছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিবর্তনের এ সময়েও লাখো প্রবাসীর ঘামে ভেজা অর্থ এখনো দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে।

তথ্যসূত্র: দৈনিক বণিক বার্তা

Logo