Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

মহান মে দিবস ও আমাদের অভিবাসী শ্রমিকদের বাস্তবতা

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:২৪

মহান মে দিবস ও আমাদের অভিবাসী শ্রমিকদের বাস্তবতা

বাংলাদেশের লাখো শ্রমিক উন্নত জীবনের আশায় মধ্যপ্রাচ্য ও মালয়েশিয়ার মতো দেশে পাড়ি জমাচ্ছেন। তবে বাস্তবতা অনেক ভিন্ন। সৌদি আরব, কাতার, ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে কর্মরত অনেক শ্রমিক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, বেতন বঞ্চনা, পাসপোর্ট জব্দ এবং অতিরিক্ত শ্রমঘণ্টার মতো সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন। বিশেষ করে গৃহকর্মী হিসেবে কর্মরত নারী শ্রমিকরা দাসত্বের মতো পরিস্থিতিতে পড়ছেন। ২০১৮ সাল থেকে সৌদি আরব থেকে ফিরে আসা ১,৫০০-এর বেশি নারী শ্রমিক নির্যাতনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন।

২০২২ সালে শুধু সৌদি আরবেই ১৩ হাজার ৬৮৫ জন বাংলাদেশি শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে, যার অধিকাংশ মৃত্যুর কারণ অজানা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চ মানসিক চাপ, অনিরাপদ কাজের পরিবেশ ও ঋণের বোঝা এই মৃত্যুর পেছনে ভূমিকা রেখেছে।

এখনো তিন মাসের ইকামা নিয়ে সৌদিতে যাচ্ছেন কর্মীরা। যাদের বেশির ভাগই অদক্ষ। সৌদি গিয়ে কাজ খুঁজতে গিয়ে শেষ হয়ে যায় ইকামার মেয়াদ। ইকামা ছাড়া কাজ করা যায় না সৌদিতে। ইকামা নবায়নে আবার লাগে টাকা। এই করে সৌদিতে বেকার হচ্ছেন বহু শ্রমিক। তাদের অনেকেই মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বেকার শ্রমিকরা ভুগছেন মানসিক যন্ত্রণায়। কেউ কেউ জড়িয়ে পড়ছেন অপরাধে। 

মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে এখনো 'কাফালা' পদ্ধতি চালু রয়েছে, যেখানে শ্রমিকদের চাকরি পরিবর্তন বা দেশত্যাগের জন্য নিয়োগকর্তার অনুমতি প্রয়োজন হয়। এই ব্যবস্থায় শ্রমিকরা নিয়োগকর্তার ইচ্ছার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন, যা শোষণের সুযোগ সৃষ্টি করে।

বাংলাদেশ সরকার অভিবাসী শ্রমিকদের সুরক্ষায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে, যেমন: বিশেষ ট্রাইব্যুনাল স্থাপন, শ্রমিক কল্যাণ বোর্ড গঠন এবং আইনি সহায়তা প্রদান। তবে বাস্তবে অনেক শ্রমিকই এই সেবাগুলোর সুবিধা পাচ্ছেন না। বিচারপ্রক্রিয়ার জটিলতা, আর্থিক সীমাবদ্ধতা ও সচেতনতার অভাব এর পেছনে দায়ী।

ধনী দেশগুলো উন্নয়ন প্রকল্প ও আন্তর্জাতিক ইভেন্টের জন্য দরিদ্র দেশ থেকে সস্তা শ্রমিক নিয়োগ করে। কাতারে ২০২২ সালের বিশ্বকাপের প্রস্তুতির সময় হাজার হাজার শ্রমিক চরম তাপদাহে কাজ করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। সৌদি আরব ২০৩৪ সালের বিশ্বকাপ আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, যেখানে শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মানবাধিকার সংস্থাগুলো।

ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ ও করণীয়

বৈধ নিয়োগ প্রক্রিয়া নিশ্চিতকরণ: নিয়োগ এজেন্সিগুলোর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বাড়াতে হবে।

দ্বিপক্ষীয় চুক্তি: গন্তব্য দেশগুলোর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা ও অধিকার নিশ্চিত করা।

সচেতনতা বৃদ্ধি: শ্রমিকদের অধিকার ও সুরক্ষা সম্পর্কে প্রশিক্ষণ ও তথ্য প্রদান।

আন্তর্জাতিক চাপ: জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমে গন্তব্য দেশগুলোর ওপর শ্রমিক অধিকার রক্ষায় চাপ সৃষ্টি।

আন্তর্জাতিক মে দিবসে আমাদের প্রতিজ্ঞা হওয়া উচিত- অভিবাসী শ্রমিকদের মর্যাদা ও অধিকার রক্ষা করা। তাদের শ্রমের মূল্যায়ন ও সুরক্ষা নিশ্চিত করাই হবে প্রকৃত শ্রমিক দিবসের সম্মান।

মাইগ্রেশন কনসার্ন রিপোর্ট 

Logo