
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে গত শনিবার পর্যন্ত নতুন করে ১ লাখ ১৩ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকেছে। ইতোমধ্যে যৌথভাবে তাদের আঙুলের ছাপও নিয়েছে বাংলাদেশ ও জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশন (ইউএনএইচসিআর)। এদের নিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মোট রোহিঙ্গার সংখ্যা দাঁড়াল অন্তত ১৩ লাখ ১৩ হাজারে। তবে নতুন আসা রোহিঙ্গাদের আইরিশের মাধ্যমে পরিচয় শনাক্তের অনুমতি এখনো দেয়নি সরকার।
নতুন আসা রোহিঙ্গাদের আবাসস্থলের ব্যবস্থা করতে বাংলাদেশকে চিঠি দিয়েছে ইউএনএইচসিআর। গত সপ্তাহে তারা শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) কার্যালয়কে এ চিঠি দেয়। রোববার রাতে সংশ্লিষ্ট একটি দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করে।
সূত্র জানায়, ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে শনিবার পর্যন্ত দেড় বছরে আসা রোহিঙ্গাদের নতুন হিসাবে শনাক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি এসেছে গত বছরের মে-জুনের পর। চলতি বছরের প্রায় প্রতিদিন রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে ঢুকছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
শুধু গত সপ্তাহেই রাখাইন থেকে এসেছে ১ হাজার ৪৪৮টি পরিবার। এছাড়া আলাদাভাবে এসেছে আরো ৫ হাজার ৯৩০ জন। নতুনভাবে আসা রোহিঙ্গারা ২৯ হাজার ৬০৭ পরিবারের সদস্য। সীমান্তে বাংলাদেশের সতর্কতার মধ্যেও নতুন আসা ১ লাখ ১৩ হাজার রোহিঙ্গার মধ্যে ৫৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ নারী, বাকিরা পুরুষ।
অপর একটি সূত্র বলছে, নতুনভাবে আসা রোহিঙ্গার অধিকাংশ বর্তমানে কক্সবাজারে ২০টি ক্যাম্পে তাদের আত্মীয়ের বাসায় রয়েছে। নতুন আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে ২৭ নম্বর ক্যাম্পে আট হাজার ৩৬৮ জন, ২৬ নম্বরে সাত হাজার ৭৭২ জন, ২৪ নম্বরে ছয় হাজার ৩৯৫ জন, ৯ নম্বর ক্যাম্পে পাঁচ হাজার ৯৫৫ জন, ক্যাম্প ১২-তে পাঁচ হাজার ৯৪০ জন, ক্যাম্প ওয়ান-ই-তে পাঁচ হাজার ৭৮৮ জন, ক্যাম্পে ১৮-তে পাঁচ হাজার ৭৪৬ জন, চার নম্বরে পাঁচ হাজার ১৫ জন, ১৩ নম্বরে চার হাজার ৩৩১ জন, সাত নম্বরে চার হাজার ১৬৫ জন, ১৭ নম্বরে চার হাজার ১৩০ জন, ১৫ নম্বরে তিন হাজার ৯৭২ জন, আট-ইতে তিন হাজার ৩৪০ জন, ওয়ান-ডব্লিউতে তিন হাজার ১৯৪ জন, টু-ইতে তিন হাজার ১১০ জন, ক্যাম্প ২৫-এ তিন হাজার ১০৩ জন, ৫ নম্বরে তিন হাজার ৩৮ জন, ১০ নম্বরে তিন হাজার ৫ জন, ১৬ নম্বরে দুই হাজার ৮৯৩ জন, তিন নম্বরে দুই হাজার ৮৯৩ জন, ১১ নম্বরে দুই হাজার ৮৩১ জন, ১৯ নম্বরে দুই হাজার ৮১৫ জন, ২১ নম্বরে দুই হাজার ৭৭১ জন, টু-ডব্লিউতে দুই হাজার ৪৫৭ জন, এইট-ডব্লিউতে দুই হাজার ২৬৯ জন, ক্যাম্প ১৪-তে এক হাজার ৬০৩ জন ও ক্যাম্প ২০ নম্বরে এক হাজার ৫০৪ জন। অনেকে আবার ক্যাম্পে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নেয়। সব রোহিঙ্গার জন্য আবাসস্থলের ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানিয়েছে ইউএনএইচসিআর। সরকার এখনো এর জবাব দেয়নি। তবে মৌখিকভাবে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থাকে জানানো হয়েছে, চলমান বাস্তবতায় লক্ষাধিক নতুন রোহিঙ্গার জন্য আবাসস্থলের ব্যবস্থা করা কঠিন। ক্যাম্পে বিদ্যালয়সহ ইউএনএইচসিআরের আর কী কী ধরনের অবকাঠামো রয়েছে, তা জানাতে বলা হয়েছে। এরপর ইউএনএইচসিআর বলছে, আলাদা ঘর তৈরি করে দেওয়া সম্ভব না হলে দোতলা ঘর বানানো যায় কিনা, তা ভেবে দেখতে হবে।
কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ার বিভিন্ন ক্যাম্পে থাকা ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা নিয়ে নানা চ্যালেঞ্জ ও ঝুঁকির মুখে আছে বাংলাদেশ। তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসন নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে দেনদরবার করছে বাংলাদেশ। এখন প্রত্যাবাসনের বদলে আরো নতুন রোহিঙ্গা দেশে ঢোকায় চাপে পড়ছে বাংলাদেশ।
তথ্যসূত্র: দৈনিক সমকাল