Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

বাড়ছে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি; তবু কেন বাড়ছে দারিদ্র্য?

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১০:১০

বাড়ছে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি; তবু কেন বাড়ছে দারিদ্র্য?

রপ্তানি আয় বাড়ছে, প্রবাসী আয়ও রেকর্ড গড়ছে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও উন্নতির দিকে। অথচ বিশ্বব্যাংক সতর্ক করেছে বাংলাদেশে দারিদ্র্য বাড়বে, প্রবৃদ্ধি কমবে। অর্থনীতির এই বিপরীত স্রোতের পেছনে কী কাজ করছে?

বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশে অতিরিক্ত ৩০ লাখ মানুষ 'অতি গরিব' শ্রেণিতে যুক্ত হবে। অতি দারিদ্র্যের হার ৭.৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ৯.৩ শতাংশে পৌঁছাবে। একই সময়ে জাতীয় দারিদ্র্য হার ২০.৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ২২.৯ শতাংশে উন্নীত হবে। জনশুমারি অনুযায়ী মোট জনসংখ্যা ১৭ কোটি ধরে হিসাব করলে ২০২৫ সালের শেষে দেশে প্রায় ১ কোটি ৫৮ লাখ 'অতি গরিব' এবং ৩ কোটি ৯০ লাখ 'গরিব' মানুষ থাকবে।

বিশ্বব্যাংক এই মূল্যায়নের পেছনে কয়েকটি বড় কারণ চিহ্নিত করেছে:

প্রথমত, দেশের প্রকৃত আয় কমে যাওয়া; দ্বিতীয়ত, দুর্বল শ্রমবাজার; তৃতীয়ত, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির শ্লথ গতি।

চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি মাত্র ৩.৩ শতাংশে নেমে আসতে পারে বলে মনে করছে সংস্থাটি, যেখানে জানুয়ারিতে পূর্বাভাস ছিল ৪.১ শতাংশ। মূল্যস্ফীতির হারও উচ্চ, গড় ১০ শতাংশের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রেইজার মন্তব্য করেছেন, "এখনই নির্দিষ্ট সংস্কারগুলোতে মনোযোগ না দিলে অর্থনীতির সহনশীলতা দুর্বল হয়ে পড়বে।" তিনি বাণিজ্য উন্মুক্তকরণ, কৃষির আধুনিকীকরণ এবং বেসরকারি খাতের গতিশীলতার ওপর জোর দিয়েছেন।

তাহলে সমস্যা কোথায়?

প্রথম দৃষ্টিতে বাংলাদেশ অর্থনীতির কিছু সূচক আশাব্যঞ্জক:

- রপ্তানি আয় বেড়ে ২০২৫ সালের মার্চে দাঁড়িয়েছে ৪.২৫ বিলিয়ন ডলার, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১১.৪৪ শতাংশ বেশি।

- প্রবাসী আয় ৬৪ শতাংশ বেড়ে মার্চে হয়েছে ৩.২৯ বিলিয়ন ডলার।

- বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৬.৩৯ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে।

কিন্তু এসব সাফল্যের পেছনে প্রকৃত উৎপাদন ও বিনিয়োগ চিত্র ভিন্ন।

অর্থনীতিবিদ ড. আইনুল ইসলাম বলেন, "দেশের ভেতরে উৎপাদন বাড়ছে না। বিনিয়োগ হচ্ছে না। রাজনীতি অস্থির, সুদের হার বেশি, ফলে অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ কমে গেছে। বিদেশি বিনিয়োগও সর্বনিম্ন স্তরে নেমেছে।"

পরিসংখ্যান বলছে:

- চলতি অর্থবছরের (২০২৪-২৫) জুলাই-সেপ্টেম্বরে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে প্রায় ৪৬ শতাংশ।

- আমদানি কার্যক্রমও হ্রাস পেয়েছে; নতুন ঋণপত্র খোলার হার কমেছে।

- বেসরকারি খাতে ব্যাংক ঋণ প্রবাহ কমে গেছে, বাড়ছে সরকারের ঋণ নির্ভরতা।

অন্যদিকে, রেমিট্যান্সের অর্থ মূলত ভোগ ব্যয়ে চলে যায়; উৎপাদন বা শিল্প খাতে বিনিয়োগ হয় না। রিজার্ভের অর্থও আমদানি ব্যয় মেটাতে ব্যবহৃত হয়, সরাসরি কর্মসংস্থান বা উৎপাদনে অবদান রাখে না।

অর্থনীতিবিদ ড. মাহফুজ কবির বলেন, "রেমিট্যান্স বা রিজার্ভ দিয়ে বিনিয়োগ হয় না। বিনিয়োগ না হলে প্রবৃদ্ধি বাড়ে না। কর্মসংস্থান হয় না। ফলে প্রকৃত আয় কমে, দারিদ্র্য বাড়ে।"

রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং বাজার আস্থার সংকট

বিশ্লেষকরা বলছেন, বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা জরুরি। বর্তমানে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং শ্রম বাজারে অস্থিরতা বিনিয়োগ কমার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ড. আইনুল ইসলামের ভাষায়, "এই পরিস্থিতি কাটাতে না পারলে বাংলাদেশের অর্থনীতি বদ্ধ পরিস্থিতিতে আটকে পড়বে এবং দীর্ঘমেয়াদে মন্দার ঝুঁকি বাড়বে।"

সামনে চ্যালেঞ্জ

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন, শুধু রপ্তানি বা রেমিট্যান্স বৃদ্ধির ওপর নির্ভর করে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা যাবে না। প্রয়োজন উৎপাদন খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো, শ্রমবাজারের গতিশীলতা ফিরিয়ে আনা এবং নীতিগত সংস্কারের মাধ্যমে আস্থা ফেরানো।

ভবিষ্যতে বিশ্ব বাণিজ্যের অনিশ্চয়তা (যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্পের সম্ভাব্য নতুন শুল্কনীতি) বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বাড়তি চাপ তৈরি করতে পারে বলেও সতর্ক করেছেন অর্থনীতিবিদরা।

তথ্যসূত্র: ডয়েচে ভেলে

Logo