দক্ষ শ্রমিক তৈরিতে ভূমিকা রাখার তাগিদ শ্রম সংস্কার কমিশনের

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২২ এপ্রিল ২০২৫, ১০:১৮

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে শ্রম সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। ২১ এপ্রিল কমিশনের সদস্যরা রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার কাছে এ প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন।
প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার গণমাধ্যমকে এ কথা জানান।
প্রতিবেদনে প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক, কৃষি, গৃহভিত্তিক, অভিবাসী, স্বনিয়োজিত শ্রমিকসহ সব শ্রমিকের অধিকারের আইনি সুরক্ষা, মর্যাদাপূর্ণ জাতীয় ও খাতভিত্তিক মজুরি নিশ্চিতে ব্যবস্থা নেওয়া, শ্রমিকের জন্য নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা, শ্রমিক-সহশ্রমশক্তির নিবন্ধন ও তথ্য ভান্ডার তৈরি এবং ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার শিথিল করে অংশগ্রহণমূলক, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক কাঠামো নিশ্চিতের সুপারিশ করেছে কমিশন। এছাড়া স্থায়ী শ্রম কমিশন গঠনের সুপারিশ রয়েছে প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারকে কর্মসংস্থান ও দক্ষ শ্রমিক তৈরিতে বিশেষ ভূমিকা রাখতে হবে। দেশে ও বিদেশে কর্মসংস্থানে রাষ্ট্রকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। বিশেষ করে যুবশক্তি ও উদ্যোক্তা তৈরির দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। শ্রমিকদের জন্য আপদকালীন তহবিল গঠন ছাড়াও শ্রমিক কল্যাণে বিদ্যমান তহবিলের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান ও শ্রমিক আন্দোলনে নিহত সব শ্রমিককে শহীদ হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
শ্রম খাতে দুর্ঘটনায় বা অবহেলাজনিত কারণে নিহতদের ক্ষতিপূরণ ও আহতদের পুনর্বাসন এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। রানা প্লাজা, তাজরীন গার্মেন্টস, হাশেম ফুডসসহ বিভিন্ন সময়ের উল্লেখযোগ্য দুর্ঘটনার জন্য দায়ীদের বিচার ও শাস্তির আওতায় আনার সুপারিশ করা হয়েছে।
কমিশনের প্রতিবেদনে শ্রমঘন এলাকায় নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করা; বিশেষ করে শিক্ষা, চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া রাস্তাঘাট নির্মাণ, বিদ্যুৎ, পানি সরবরাহ নিশ্চিতের সুপারিশ করা হয়েছে। শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত, সামাজিক বীমা ব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে।
নারী ও পুরুষ, লিঙ্গ, জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠী ভেদে মজুরি বৈষম্য দূর করতে রাষ্ট্রকে দায়িত্ব নিতে হবে। একই সঙ্গে পাহাড়, সমতল আদিবাসী ও বহু জাতিগোষ্ঠীর শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও কর্মসংস্থা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
কমিশনের প্রতিবেদনে যৌন হয়রানি ও সহিংসতা থেকে সুরক্ষা নিশ্চিত করা, সব কারখানা ও প্রতিষ্ঠানে যৌন নিপীড়ন ও সহিংসতাবিরোধী নীতিমালা প্রণয়নসহ সব প্রতিষ্ঠানে শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ৬ মাসের ছুটি রাষ্ট্রকে নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। কমিশনের প্রতিবেদনে শ্রমিক, শ্রম অধিকার সংশ্লিষ্ট প্রায় তিন শতাধিক সুপারিশ করা হয়।
অন্তর্বর্তী সরকার ২০২৪ সালের ১৭ নভেম্বর বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিআইএলএস) নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদকে প্রধান করে ১০ সদস্যের একটি শ্রম সংস্কার কমিশন গঠন করে। কমিশনের অন্য সদস্যরা হলেন- শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ড. মাহফুজুল হক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজের অধ্যাপক ড. জাকির হোসেন, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র টিইউসির চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটির সভাপতি তপন দত্ত, বাংলাদেশ লেবার কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট একেএম নাসিম, বাংলাদেশ এমপ্লয়ার ফেডারেশনের সাবেক সভাপতি এম কামরান টি রহমান, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের সভাপতি চৌধুরী আশিকুল আলম, বাংলাদেশ লেবার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক শাকিল আখতার চৌধুরী, আলোকচিত্রী ও শ্রমিক আন্দোলনের সংগঠক তাসলিমা আখতার এবং একজন ছাত্র প্রতিনিধি।
তথ্যসূত্র: দৈনিক যুগান্তর