Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসীদের পেশা ও রেমিট্যান্স প্রবাহে অবদান

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২০ এপ্রিল ২০২৫, ১২:১৭

যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসীদের পেশা ও রেমিট্যান্স প্রবাহে অবদান

যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশি প্রবাসীরা নানা পেশায় কাজ করে শুধু নিজেদের জীবিকা নির্বাহই করছেন না, বরং বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও রাখছেন দৃঢ় অবদান। তথ্যপ্রযুক্তি থেকে শুরু করে পরিবহন খাত পর্যন্ত বিস্তৃত এ পেশাগত পরিসর এবং এর ফল হিসেবে রেমিট্যান্স প্রেরণের পরিমাণ ক্রমেই বাড়ছে।

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি প্রবাসীরা প্রধানত যেসব পেশায় যুক্ত আছেন, সেগুলো হলো- 

১. তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রকৌশল

অনেক বাংলাদেশি প্রবাসী তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) এবং প্রকৌশল খাতে সফলভাবে কাজ করছেন। তারা সফটওয়্যার ডেভেলপার, সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার, নেটওয়ার্ক অ্যাডমিনিস্ট্রেটর ও অন্যান্য প্রযুক্তি-সম্পর্কিত পেশায় নিযুক্ত। এই খাতে তাদের উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে।

২. স্বাস্থ্যসেবা ও চিকিৎসা

বাংলাদেশি আমেরিকানরা চিকিৎসা পেশায়ও সক্রিয়। তারা চিকিৎসক, নার্স, ফার্মাসিস্ট এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা পেশায় কাজ করছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে কর্মরত।

৩. ব্যবসা ও উদ্যোক্তা

অনেক বাংলাদেশি প্রবাসী যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করেছেন। তারা রেস্টুরেন্ট, গ্রোসারি স্টোর, পোশাকের দোকান ও অন্যান্য খুচরা ব্যবসায় নিযুক্ত। নিউইয়র্ক, নিউ জার্সি, ক্যালিফোর্নিয়া ও টেক্সাসে তাদের ব্যবসা উল্লেখযোগ্যভাবে বিস্তৃত।

৪. শিক্ষাবিদ ও গবেষক

বাংলাদেশি প্রবাসীরা যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা ও গবেষণায় নিয়োজিত। তারা পদার্থবিজ্ঞান, গণিত, কম্পিউটার বিজ্ঞান এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে গবেষণা করছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই উল্লেখযোগ্য গবেষণা ও প্রকাশনার জন্য পরিচিত।

৫. পরিবহন ও সেবা খাত

নিউইয়র্ক সিটি এবং অন্যান্য শহরে অনেক বাংলাদেশি প্রবাসী ট্যাক্সি ড্রাইভার, লিমোজিন চালক এবং অন্যান্য পরিবহন সেবায় নিযুক্ত। তারা শহরের পরিবহন ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।

৬. নির্মাণ ও কারখানা খাত

কিছু বাংলাদেশি প্রবাসী নির্মাণকাজ, কারখানা শ্রমিক ও অন্যান্য ম্যানুয়াল শ্রমে নিযুক্ত। তারা বিভিন্ন নির্মাণ প্রকল্প এবং উৎপাদন খাতে কাজ করছেন।

রেমিট্যান্স প্রবাহে যুক্তরাষ্ট্রের স্থান প্রথম

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রেরিত রেমিট্যান্সের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২.২৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা মোট বৈদেশিক রেমিট্যান্স আয়ের প্রায় ১৫ শতাংশ। বিগত বেশ কয়েক মাস ধরেই রেমিট্যান্স পাঠানোর শীর্ষ দেশ হিসেবে তালিকার এক নম্বরে অবস্থান করছে এই দেশটি।

বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসীদের উপার্জনের গড় পরিমাণ বেশি হওয়ায় তারা পরিবারের জন্য নিয়মিত অর্থ প্রেরণ করতে সক্ষম হন। অনেকে বাংলাদেশে বাড়িঘর নির্মাণ, ছোট ব্যবসায় বিনিয়োগ কিংবা সন্তানদের শিক্ষা খাতে এই রেমিট্যান্স ব্যয় করেন।

নিউইয়র্ক প্রবাসী সফটওয়্যার প্রকৌশলী রাকিব হোসেন জানান, "আমি প্রতি বছর ১০-১২ হাজার ডলার রেমিট্যান্স পাঠাই। শুধু পরিবার নয়, দেশের ব্যাংকে কিছু সঞ্চয় রাখার চেষ্টা করি ভবিষ্যতের জন্য।"

আরো এক প্রবাসী, লস অ্যাঞ্জেলেসের একটি রেস্টুরেন্ট ব্যবসার মালিক রুমি আহমেদ বলেন "আমার ব্যবসা এখানেই বড় করেছি। কিন্তু দেশের মাটিতে এখনো শিকড় আছে। প্রতি মাসে বাবার জন্য টাকা পাঠানো এক ধরনের শান্তি।"

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, প্রবাসী আয়ের এই প্রবাহ বাংলাদেশের রিজার্ভ স্থিতিশীলতা, টাকার মান ধরে রাখা এবং গ্রামীণ অর্থনীতিকে সচল রাখতে বড় ভূমিকা রাখে। বিশেষত ডলার সংকট মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের মতো উচ্চ আয়ের দেশ থেকে রেমিট্যান্স আসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি প্রবাসীরা শুধু কর্মক্ষমতা দিয়ে নয়, বরং তাদের পাঠানো রেমিট্যান্সের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে একটি সুদৃঢ় ভূমিকা রাখছেন। এই অবদান আরো বাড়াতে হলে প্রবাসীদের জন্য ব্যাংকিং সহায়তা, ডলারের প্রতিযোগিতামূলক হার এবং সহজ রেমিট্যান্স প্রেরণের সুযোগ নিশ্চিত করা জরুরি।

এমসি ডেস্ক

Logo