
দেশের শ্রমবাজারে কথিত ‘ফ্রি ভিসা’ প্রবাসীদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কাগজে-কলমে এই ভিসার অস্তিত্ব না থাকলেও প্রচুর মানুষ এই ভিসায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় পাড়ি জমাচ্ছেন। এ ভিসায় যাওয়া প্রবাসীদের অধিকাংশই প্রতারিত হয়ে দেশে ফিরছেন। অনেকে কাজ না পেয়ে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোয় মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। আবার অনেকে গিয়ে উপকৃতও হচ্ছেন। তবে প্রতারিত হওয়ার সংখ্যাই বেশি।
এ বিষয়ে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর সহকারী পরিচালক দেবব্রত ঘোষ বলেন, ‘ফ্রি ভিসায় কীভাবে মানুষ বিদেশে যায়, বিষয়টি আমার কাছে বোধগম্য নয়। কারণ বিএমইটি থেকে ফ্রি ভিসা নামে কোনো ভিসার ছাড়পত্র দেওয়া হয় না। তাহলে এজেন্সি বা এর সঙ্গে জড়িতরা হয়তো অন্য কোনো কাজ দেখিয়ে এই ভিসা করান। নয়তো এটি সম্ভব নয়।' মূলত দালাল চক্রের সিন্ডিকেটের ভাষা ফ্রি ভিসা। তারা সাধারণ মানুষের কাছে লোভনীয় কথা বলে বিদেশ গমনে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের আকৃষ্ট করে। এই দালাল চক্র দুই দেশেই সক্রিয়।
প্রকৃতপক্ষে ফ্রি ভিসা কী? বিষয়টি সম্পর্কে সৌদি আরবের জিজান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও প্রবাসী এবং অভিবাসীবিষয়ক গবেষক ড. হোসাইন আহমেদ বলেন, সৌদি আরবে দীর্ঘদিন ধরে থাকা স্থানীয় অনেক বাংলাদেশি ভিসা কেনাবেচা করেন। ধরেন, একটি ফার্মেসিতে দুজন কর্মীর প্রয়োজন। কিন্তু সেই জায়গায় দালালের প্ররোচনায় নিয়োগকর্তা প্রতিষ্ঠান প্রয়োজনের তুলনায় অধিক ভিসা ইস্যু করে। পরে দালালের সঙ্গে একটি মৌখিক চুক্তিতে নিয়োগকর্তা তাদের হাতে ভিসা তুলে দেন।
তিনি আরো বলেন, ‘ইস্যুকৃত ওই ভিসা বাংলাদেশের কিছু এজেন্সি বা দালালের কাছে বিক্রি করে। বাংলাদেশি দালালরা সেই ভিসায় সৌদিতে লোক পাঠায়। এই প্রক্রিয়ায় বিদেশে যাওয়ার পর প্রবাসীদের কাজ ছাড়াই থাকতে হয়। মূলত নিজের কাজ নিজেই খুঁজতে হয়। অনেক সময় ঘরবন্দি থাকতে হয়। সৌদিতে এ রকম প্রবাসীর সংখ্যা এখন অনেক বেশি। ফলে সৌদিতে প্রবাসীর সংখ্যা বাড়লেও কার্যত বাড়ছে না রেমিট্যান্স। এখন প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। নয়তো অবস্থা ভয়াবহ হতে পারে।’
জানা গেছে, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় কথিত ফ্রি ফিসা চালু আছে। প্রতিনিয়ত মানুষ এই ভিসায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে যাচ্ছেন। তবে কতসংখ্যক মানুষ এই ভিসায় দেশ ছাড়ে তার সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। তবে মধ্যপ্রাচ্যের বড় শ্রমবাজার সৌদি আরবে এই ভিসায় যাওয়া প্রবাসীর সংখ্যা সব থেকে বেশি। যার প্রভাব পড়েছে রেমিট্যান্সে। কিছুদিন ধরেই প্রবাসীর তুলনায় রেমিট্যান্স কমেছে এই শ্রমবাজারে।
তথ্যসূত্র: দ্য ডেইলি স্টার