ভারত-চীনের সম্পর্কের বরফ গলছে; তিন মাসে ৮৫ হাজার ভিসা দিল বেইজিং

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২০ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০৭

ভারত ও চীনের মধ্যকার সম্পর্ক আরো জোরালো করতে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে বেইজিং। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত ৯৮ দিনে ভারতে অবস্থিত চীনা দূতাবাস ৮৫ হাজারের বেশি ভারতীয়কে চীনা ভিসা দিয়েছে। ভারতে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত সু ফিহং এই তথ্য জানিয়েছেন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, চীনা রাষ্ট্রদূত সু ফিহং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ বিষয়ে একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘২০২৫ সালের ৯ এপ্রিল পর্যন্ত ভারতে চীনা দূতাবাস এবং কনস্যুলেটগুলো ভারতীয় নাগরিকদের জন্য ৮৫ হাজারের বেশি ভিসা ইস্যু করেছে।’
চীনে ভারতীয়দের স্বাগত জানিয়ে ও দেশটি ভ্রমণে উৎসাহ দিয়ে রাষ্ট্রদূত সি ফিহং বলেন, ‘আমরা আরো বেশি ভারতীয় বন্ধুদের চীন ভ্রমণের জন্য স্বাগত জানাই। আপনারা এসে একটি উন্মুক্ত, নিরাপদ, প্রাণবন্ত, আন্তরিক এবং বন্ধুত্বপূর্ণ চীন অনুভব করুন।’
ভারতীয় ভ্রমণকারীদের জন্য ভিসার নিয়ম শিথিল করেছে চীন। এখন থেকে ভারতীয় আবেদনকারীরা আগেভাগে নেওয়া কোনো অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছাড়াই সরাসরি ভিসা কেন্দ্রে গিয়ে ভিসার আবেদন করতে পারবেন। স্বল্প সময়ের জন্য চীন ভ্রমণকারীদের জন্য বায়োমেট্রিক ডেটা দেওয়ার বাধ্যবাধকতাও তুলে নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া চীনা ভিসার খরচও কমানো হয়েছে, যা ভারতীয়দের জন্য চীন ভ্রমণ আরো সহজলভ্য করে তুলবে। ভিসার অনুমোদন প্রক্রিয়াও আগের চেয়ে অনেক দ্রুত হয়েছে, যা ব্যবসা এবং অবকাশ যাপনের জন্য চীন যেতে ইচ্ছুক উভয় প্রকার ভ্রমণকারীদের জন্যই সুবিধা বয়ে আনবে। চীন এখন ভারতীয় পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক এবং ঋতুভিত্তিক আকর্ষণ, যেমন উৎসব এবং দর্শনীয় স্থানগুলো তুলে ধরছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিভিন্ন দেশের ওপর শুল্ক আরোপ করেছেন। যদিও চীন ছাড়া পরে সব দেশের ওপর আরোপিত বাড়তি শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করেছেন। কিন্তু চীনের ওপর এখন ১৪৫ শতাংশ মার্কিন শুল্ক রয়ে গেছে।
এ বিষয়ে ভারতে চীনা দূতাবাসের মুখপাত্র ইউ জিং ভারত ও চীনের অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্যিক সম্পর্কের গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘চীন-ভারত অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক পারস্পরিক সুবিধা এবং পরিপূরকতার ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে। আমেরিকার শুল্কের অপব্যবহারের মুখে বৃহত্তম দুটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমাদের একসঙ্গে এই অসুবিধাগুলো মোকাবিলা করা উচিত।’
ইউ জিং আরো বলেন, ‘বাণিজ্য এবং শুল্ক যুদ্ধে কোনো পক্ষই জয়ী হয় না। সব দেশেরই উচিত ব্যাপক আলোচনার নীতি অনুসরণ করা, প্রকৃত বহুপাক্ষিকতাবাদ চর্চা করা এবং একতরফাবাদ ও সংরক্ষণবাদের সকল প্রকারের বিরোধিতা করা।’
ভারত ও চীনের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্ক নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। বিশেষ করে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলএসি) বরাবর চলমান সামরিক অচলাবস্থা একটি বড় উদ্বেগ। তবে এই ভিসা ছাড়ের পদক্ষেপকে চীনের একটি নরম শক্তি প্রয়োগের কৌশল হিসেবে দেখা যেতে পারে। এর মাধ্যমে ভারত এবং চীনের সাধারণ মানুষের মধ্যে একটি ইতিবাচক বার্তা পৌঁছানো যাবে এবং পারস্পরিক আস্থা তৈরি হবে। যদিও দুই দেশের কর্মকর্তারা সীমান্ত এবং বাণিজ্য সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছেন, এই ধরনের পদক্ষেপ নিচুতলার মানুষের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে সেই প্রক্রিয়াকে আরো শক্তিশালী করতে পারে।
ভিসা ইস্যু বৃদ্ধির এই ঘটনা ভারত ও চীনের মধ্যে সাংস্কৃতিক, শিক্ষা, ব্যবসা এবং পর্যটনবিষয়ক আদান-প্রদান বাড়ানোর একটি নতুন অঙ্গীকারের প্রতিফলন। চীন দীর্ঘদিন ধরেই ভারতীয় শিক্ষার্থীদের জন্য একটি কাঙ্ক্ষিত গন্তব্য। বিশেষ করে মেডিকেল ডিগ্রি অর্জনের জন্য বহু ভারতীয় শিক্ষার্থী চীনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।
তথ্যসূত্র: দৈনিক আজকের পত্রিকা