যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল: দক্ষিণ এশিয়ায় সম্ভাব্য প্রভাব
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭:৪৭
যুক্তরাষ্ট্রের সদ্য প্রকাশিত জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলপত্রে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে সামরিক শক্তি বাড়ানোর ঘোষণা এসেছে। ইউরোপ যেখানে স্থিতিশীলতা, সমৃদ্ধি ও টেকসই উন্নয়নের কথা বলছে, সেখানে যুক্তরাষ্ট্র স্পষ্টভাবে সামরিক উপস্থিতি জোরদারের কথা বলছে। মূলত তাইওয়ানকেন্দ্রিক ‘ফার্স্ট আইল্যান্ড চেইন’ রক্ষা এবং চীনের উত্থান মোকাবিলা করাই এ কৌশলের প্রধান লক্ষ্য।
কৌশলপত্রে বলা হয়েছে, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলকে মুক্ত ও উন্মুক্ত রাখতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করছে, বিদেশি পক্ষগুলো আমেরিকান অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। তাই তারা ইউরোপ, জাপান, কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, মেক্সিকোসহ মিত্র দেশগুলোকে নতুন বাণিজ্য নীতি গ্রহণে উৎসাহিত করছে। এর মাধ্যমে চীনের অর্থনীতিকে গৃহস্থালি ব্যবহারের দিকে ঠেলে দেওয়া এবং বৈশ্বিক বাজারে তার প্রভাব কমানোই মূল উদ্দেশ্য।
যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে ইন্দো-প্যাসিফিক নিরাপত্তার মূল অংশীদার হিসেবে চিহ্নিত করেছে। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিম্নমুখী হলেও কৌশলপত্রে ভারতকে গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী বলা হয়েছে। এর ফলে ভারত মহাসাগরে মার্কিন নির্ভরতা বাড়বে, প্রযুক্তি সহযোগিতা ও সরবরাহ শৃঙ্খলা আরো দৃঢ় হবে। দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনীতিতে ভারতের গুরুত্ব আরো বেড়ে যাবে।
বাংলাদেশকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের একটি ‘মূল অংশীদার’ হিসেবে দেখে। তবে মার্কিন কৌশলপত্রে বাংলাদেশের নাম সরাসরি উল্লেখ নেই। তবুও প্রতিযোগিতা তীব্র হলে বাংলাদেশের ওপর কূটনৈতিক চাপ বাড়তে পারে। কারণ বাংলাদেশ চীনের ওপর অর্থনৈতিকভাবে নির্ভরশীল। যুক্তরাষ্ট্র-ভারত ঘনিষ্ঠ হলে বাংলাদেশের জন্য কৌশলগত ভারসাম্য রক্ষা কঠিন হয়ে পড়বে।
যুক্তরাষ্ট্র চায় এশিয়ার দেশগুলো চীনের ওপর নির্ভরতা কমাক। এজন্য তারা মিত্র দেশগুলোকে বাণিজ্য নীতি পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জন্য এটি দ্বিমুখী চাপ তৈরি করবে। একদিকে চীনের বাজারে প্রবেশাধিকার, অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত চাপ; বাংলাদেশের মতো দেশকে ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে।
‘ফার্স্ট আইল্যান্ড চেইন’ রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র সামরিক বাহিনী শক্তিশালী করতে চায়। এতে জাপান, তাইওয়ান, ফিলিপাইন ও ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে যৌথ প্রতিরক্ষা বাড়বে। দক্ষিণ এশিয়ায় এর প্রভাব পড়বে ভারত মহাসাগরে। বাংলাদেশকে সরাসরি টানার চেষ্টা না হলেও আঞ্চলিক নিরাপত্তা প্রতিযোগিতা বাড়বে।
বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে কূটনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা। চীনের অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও অবকাঠামো বিনিয়োগ বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত ইন্দো-প্যাসিফিক নিরাপত্তায় ঘনিষ্ঠ হলে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখাও জরুরি। ফলে বাংলাদেশকে বহুমুখী কূটনীতি চালাতে হবে।
logo-1-1740906910.png)