দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম সম্ভাবনাময় অর্থনীতি মালয়েশিয়া এখন কঠিন আঞ্চলিক প্রতিযোগিতার মুখে। প্রতিবেশী সিঙ্গাপুর, দ্রুত এগিয়ে যাওয়া ভিয়েতনাম এবং প্রযুক্তি-চালিত দক্ষিণ কোরিয়ার মাঝখানে দেশটি অবস্থান করছে এক অস্বস্তিকর ‘মিসিং মিডল’-এ। ফলে চাকরির মান, মজুরি এবং তরুণ প্রজন্মের ক্যারিয়ার উন্নয়ন; সব ক্ষেত্রেই দেখা দিচ্ছে কাঠামোগত সংকট। মালয়েশিয়ার সংবাদ মাধ্যম দ্য এজ এ বিষয়ে একটি আর্টিকেল প্রকাশ করেছে।
প্রতি ডিসেম্বর মালয়েশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে হয় সনদ বিতরণের উৎসব। কিন্তু উৎসবের পরবর্তী বাস্তবতায় দেখা যায়, প্রতি বছর প্রায় তিন লাখ স্নাতক শ্রমবাজারে প্রবেশ করলেও তাদের উপযুক্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ সীমিত। দেশের মধ্যম বেতন এখনো প্রায় ৩ হাজার রিঙ্গিতের কাছাকাছি, যেখানে অর্ধেক কর্মী এই মাত্রার নিচে আয় করেন। তুলনায় সিঙ্গাপুরে মধ্যম আয় ৫ হাজার ৭০০ সিঙ্গাপুর ডলার আর দক্ষিণ কোরিয়ায় মালয়েশিয়ার প্রায় তিন গুণ।
শুধু মজুরি নয়, চাকরির কাঠামোতেও বড় বৈষম্য। সিঙ্গাপুরে দুই-তৃতীয়াংশ কর্মী উচ্চদক্ষতার পেশায় কাজ করেন; যেমন-ম্যানেজমেন্ট, ফাইন্যান্স, প্রযুক্তি বা উদ্ভাবনী খাতে। অন্যদিকে ভিয়েতনাম কম খরচের শ্রমশক্তিকে কাজে লাগিয়ে দ্রুত শিল্পায়ন করছে। কোরিয়া পুরোপুরি উচ্চ-আয়ের প্রযুক্তিনির্ভর অর্থনীতি হলেও সেখানে যুব বেকারত্ব ও শ্রমবাজারের দ্বৈততা বড় সমস্যা।
মালয়েশিয়ার অবস্থা ভিন্ন ও জটিল। দেশের অর্ধেকের বেশি শ্রমিক কাজ করেন সেমি-স্কিল্ড পেশায়। ২০১৮ সালে যেখানে ৪৫% কর্মসংস্থান ছিল স্কিল্ড পেশায়, ২০২৪ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ২৭%-এ। একই সময়ে প্রায় ২০ লাখ স্নাতক এখন কাজ করছেন তাদের যোগ্যতার তুলনায় কম দক্ষতার চাকরিতে, যা তৈরি করেছে “গ্র্যাজুয়েট আন্ডারএমপ্লয়মেন্ট” সংকট।
ফলে বেতন কাঠামো আটকে গেছে মধ্যম স্তরে। উৎপাদনশীলতা বাড়লেও মজুরি বাড়ছে না একই হারে। উচ্চদক্ষতার চাকরির সংখ্যা কম হওয়ায় তরুণদের মধ্যে দেখা দিচ্ছে হতাশা, কর্মজীবনে অগ্রগতির বিলম্ব এবং বিদেশে যাওয়ার প্রবণতা।
আঞ্চলিক দৃষ্টিতে মালয়েশিয়া এখন দুই দিক থেকে চাপে
- ভিয়েতনাম কম খরচে বড় উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে কোম্পানি আকর্ষণ করছে।
- সিঙ্গাপুর ও কোরিয়া উচ্চদক্ষতাভিত্তিক উদ্ভাবনী খাত দখলে এগিয়ে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, মালয়েশিয়ার মূল সমস্যা হলো “দ্বিধা”। দেশটি পুরোপুরি উচ্চদক্ষতাভিত্তিক অর্থনীতিতে রূপান্তরেও আগায়নি, আবার কম খরচের শ্রমনির্ভর শিল্পেও টিকে নেই। এ অবস্থায় টেকসই বেতন বৃদ্ধি, মধ্যবিত্তের ক্রয়ক্ষমতা, উৎপাদনশীলতা; সবই ঝুঁকিতে পড়েছে।
সংকট কাটাতে প্রয়োজন চাকরির মানোন্নয়ন, দক্ষতা বিকাশ এবং বিশ্ববিদ্যালয়-শিল্প খাত সংযোগ জোরদার করা। না হলে মালয়েশিয়ার তরুণদের জন্য শিক্ষার প্রতিশ্রুতি আর স্থায়ী উন্নয়নের পথ ক্রমেই সংকীর্ণ হয়ে উঠবে।
logo-1-1740906910.png)