মালয়েশিয়ার খবর ২৩ সেপ্টেম্বর
মালয়েশিয়ায় স্ক্যামের ছড়াছড়ি: সঞ্চয় হারিয়ে দিশেহারা মানুষ

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৯:৩৫

অনলাইনে স্ক্যামের ছড়াছড়ি মালয়েশিয়ায়। ঘটছে একের পর এক ঘটনা। স্ক্যামারদের খপ্পরে পড়ে অর্থ হারিয়ে দিশেহারা মানুষ। স্ক্যাম বা অনলাইনে জালিয়াতি করে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে সাধারণ মানুষের সঞ্চয়। প্রতিদিন মালয়েশিয়ার সংবাদমাধ্যম বারনামা, দ্য স্টার বা নিউ স্ট্রেইট টাইমসে উঠে আসছে সেসব স্ক্যামে প্রতারিত হওয়ার খবর। মালয়েশিয়ায় থাকেন যে ৯ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশি, তারা কি জালিয়াতদের ঝুঁকি থেকে মুক্ত? কীভাবে হয় সেই প্রতারণা? আর স্ক্যামারদের হাত থেকে কীভাবে রক্ষা করা যাবে জীবনের সঞ্চয়?
২০ সেপ্টেম্বর বারনামার এক খবরে জানানো হয়, দেশটির কুয়ালা কেরেঙ্গানু জেলায় ৬২ বছর বয়সী একজন ভদ্রলোক খুইয়েছেন, ৭৬ হাজার রিংগিত বা আনুমানিক ২২ লাখ টাকা। সোশ্যাল মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন দেখে, এক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যানে জড়িয়ে যান। হোয়াটসঅ্যাপে এক নারীর কথামতো ৭টি বিভিন্ন ব্যাংকে রিংগিত ডিপোজিট করেছিলেন। খোয়া গেছে তার সব সঞ্চয়। ফেরত পাননি এক রিংগিতও।
একই জেলায় ৬২ বছর বয়সী এক নারীর ভাগ্যেও ঘটেছে এমন ঘটনা। অনলাইন স্ক্যামের শিকার হয়ে তিনিও হারিয়েছেন সব সঞ্চয়। বারনামার খবরে বলা হয়েছে, ওই বৃদ্ধ নারী অস্তিত্বহীন কোম্পানিতে ৫ লাখ ৭২ হাজার রিংগিত বা ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগ করেছিলেন। কথা ছিল ২০ পারসেন্ট হারে লভাংশ দেবে কোম্পানি। লাভের মুখে পড়ে একে একে বিনিয়োগ করেছিলেন ওই নারী। পরে দেখা যায় তার রিংগিত নাই, কোম্পানিও লাপাত্তা।
এভাবে একের পর এক অস্তিত্বহীন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে জীবনের সঞ্চয় হারানোর খবর মালয়েশিয়ার সংবাদ মাধ্যমে। প্রতিদিন ঘটছে এমন স্ক্যামের ঘটনা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এসব স্ক্যামারদের ধরতে পারে না মালয়েশিয়ার পুলিশ। কারণ স্ক্যামাররা থাকে ভিনদেশে। কারবার চলে অনলাইনে। কোম্পানির থাকে না কোনো ঠিকানা। কিন্তু মালয়েশিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশিরা কি পড়েন এই প্রতারণায়?
কেবল মালয়েশিয়ানরাই নন, স্ক্যামের শিকার হচ্ছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরাও। মালয়েশিয়ায় থাকে প্রায় ৯ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশি। মালয়েশিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশিরা সবচেয়ে বেশি প্রতারণায় পড়েন ফিশিং স্ক্যামে। পাসপোর্ট আর ভিসা নবায়ন করে দেওয়ার নামে চলে এসব প্রতারণা। ভুয়া ওয়েবসাইটে চলে কাজকারবার। এসব ফিশিং স্ক্যামের কারণে এক বাংলাদেশি নারীকেও গ্রেফতারের খবর আসে মালয়েশিয়ার গণমাধ্যমে। এছাড়া শপি বা লাজাডা নামে ভুয়া সাইটে টাকা নিয়ে ডেলিভারি না দিয়ে চলে প্রতারণা। দেশটিতে লাভ স্ক্যাম বা ভালোবাসার আশ্বাসে প্রতারণা হয় হরহামেশাই। ফেসবুক আর টিকটকেই এসব প্রতারণা হয়। তাছাড়া পার্টটাইম জব যাতে বা হয় সার্ভে করলেই টাকা এসব কথা বলে প্রবাসী বাংলাদেশিরা পড়েন প্রতারণায়।
২২ সেপ্টেম্বর এক খবরে দেখা যায়, মালয়েশিয়ার পুলিশ স্ক্যাম সিন্ডিকেটে জড়িত থাকার সন্দেহে ২৪ জনকে আটক করেছে। তাদের মধ্যে ছিল ১০ জন বিদেশি। কিন্তু জালিয়াতির ঘটনার সংখ্যার বিবেচনায় অপরাধী গ্রেফতারের সংখ্যা কম। মালয় মেইলের তথ্য থেকে জানা যায়, শুধু মালয়েশিয়াতেই এ বছর অনলাইন প্রতারণায় ক্ষতি হয়েছে ১.৫ বিলিয়ন রিংগিত, যা প্রায় ৩৫৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ।
তাহলে কীভাবে স্ক্যাম থেকে বাঁচবেন মালয়েশিয়ার প্রবাসী বাংলাদেশিরা?
প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, বেশি টাকার লোভে অনলাইনে ইনভেস্টমেন্টে টাকা বিনিয়োগ করা যাবে না। বিদেশে অপরিচিত কারো সাথে ফোনে কথা বলা যাবে না। তার কথা মতো ব্যাংক অ্যাকাউন্টের কোনো তথ্য বা বাসার ওয়াই-ফাইয়ের লনইন তথ্য দেওয়া যাবে না। ফেসবুকে চটকদার কোনো কিছুতে ক্লিক করা যাবে না। পরিচিত বা বিশ্বস্ত মাধ্যমে টাকা পাঠাতে হবে দেশে। কারণ স্ক্যামারদের ধরা কঠিন, কিন্তু একটু সতর্ক থাকলেই স্ক্যামারদের জালিয়াতির হাত থেকে বাঁচা যায়।