
মালয়েশিয়ার উচ্চ-আয়ের অর্থনীতিতে উত্তরণ আজ বিশ্বজুড়ে আলোচিত একটি সাফল্যগাথা। বিজনেস ডেইলি আফ্রিকা পত্রিকার কলামিস্ট সিজার মওয়াঙ্গি তার মালয়েশিয়া সফরের অভিজ্ঞতা ও তুলনামূলক বিশ্লেষণের ভিত্তিতে আফ্রিকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু শিক্ষণীয় দিক তুলে ধরেছেন।
১৯৬৪ সালে মালয়েশিয়ার মাথাপিছু আয় ছিল মাত্র ৩০০ ডলার, আর সদ্য স্বাধীন কেনিয়ার ছিল ১৪০ ডলার। অথচ ২০২৩ সালে মালয়েশিয়া মাথাপিছু আয় ১২ হাজার ডলারে পৌঁছেছে, যেখানে কেনিয়া এখনো ২ হাজার ২০০ ডলারে অবস্থান করছে। এই ব্যবধানের পেছনে রয়েছে শিল্পায়ন, মানবসম্পদে বিনিয়োগ, আঞ্চলিক সহযোগিতা এবং সুশাসনের মতো মূলনীতি।
মালয়েশিয়া তাদের প্রাকৃতিক সম্পদের উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে মূল্য সংযোজনের দিকে মনোযোগ দিয়েছে। যেমন রাবার ও পাম অয়েল থেকে উৎপাদিত পণ্য। অন্যদিকে কেনিয়া এখনো চা ও কফির মতো কাঁচামাল রপ্তানিতে সীমাবদ্ধ। ২০২৩ সালে মালয়েশিয়ার মোট দেশজ উৎপাদনের (GDP) ৫৯.২% এসেছে সেবা খাত থেকে এবং ২৩.৪% উৎপাদন খাত থেকে। তুলনামূলকভাবে, কেনিয়ার উৎপাদন খাত জিডিপির মাত্র ৭.৬% এবং সেবা খাত ২১.৮%।
দারিদ্র্য হ্রাসেও মালয়েশিয়া এগিয়ে। ১৯৭০ সালে দেশটির ৫০% মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকলেও ২০২০ সালে তা কমে দাঁড়ায় মাত্র ৬%-এ। একই সময়ে কেনিয়ার দারিদ্র্যের হার ছিল ৩৩%।
মওয়াঙ্গি তার বিশ্লেষণে চারটি মূল স্তম্ভ চিহ্নিত করেছেন- অর্থনৈতিক নীতি, প্রতিষ্ঠান ও শাসনব্যবস্থা, শিক্ষা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং সামাজিক অন্তর্ভুক্তি ও জাতীয় সংহতি। তার মতে, আফ্রিকান দেশগুলো যদি এই ক্ষেত্রগুলোতে মালয়েশিয়ার মতো অগ্রগতি সাধন করতে পারে, তবে তারা অর্থনৈতিকভাবে অনেক দূর এগোতে পারবে।
এই তুলনামূলক বিশ্লেষণ আফ্রিকার নীতিনির্ধারকদের জন্য একটি সতর্কবার্তা ও অনুপ্রেরণা; যেখানে শুরু একই ছিল, কিন্তু গন্তব্যে পার্থক্য তৈরি হয়েছে পরিকল্পনা ও প্রয়োগের দক্ষতায়।
তথ্যসূত্র: বিজনেস ডেইলি আফ্রিকা