কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরে ‘কাউন্টার সেটিং’ কেলেঙ্কারি

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২৯ জুলাই ২০২৫, ০৮:৩৪

মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ‘কাউন্টার সেটিং’ নামে পরিচিত একটি দুর্নীতিগ্রস্ত অভিবাসন চক্র উন্মোচিত হয়েছে, যা দেশটির সীমান্ত নিরাপত্তা, মানব পাচার প্রতিরোধ এবং অভিবাসন ব্যবস্থার স্বচ্ছতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে।
এই চক্রের মাধ্যমে বিদেশি নাগরিকদের বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই বিশেষ কাউন্টার ব্যবহার করে মালয়েশিয়ায় প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হতো। মালয়েশিয়ার দুর্নীতি দমন কমিশন ইতোমধ্যে ৬০ জনের বেশি ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে, যার মধ্যে রয়েছে ৪৯ জন অভিবাসন কর্মকর্তা, একজন পুলিশ সদস্য, দুইজন এজেন্ট এবং আটজন ‘মিউল অ্যাকাউন্ট’ সরবরাহকারী।
কমিশনের প্রধান কমিশনার তান শ্রী আজাম বাকি জানিয়েছেন, এই চক্রের মূলহোতা একজন অভিজ্ঞ অভিবাসন কর্মকর্তা, যিনি ২০ বছর ধরে বিভাগে কর্মরত ছিলেন এবং ৫০ জনের বেশি সহকর্মীকে প্রভাবিত করে চক্রে যুক্ত করেন। অভিযানে ১.৪৯ মিলিয়ন রিংগিত নগদ অর্থ, ৯টি গাড়ি, ১৩টি মোটরসাইকেল, ২৭টি স্বর্ণের অলঙ্কার এবং ৭৫টির বেশি গহনা জব্দ করা হয়েছে।
চক্রটি হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে যোগাযোগ করে নির্দিষ্ট দিনে বিদেশিদের প্রবেশের ব্যবস্থা করত। পাসপোর্ট নম্বর ও ছবি আগেই পাঠানো হতো এবং বিশেষ কাউন্টার নম্বর জানিয়ে দেওয়া হতো, যাতে তারা সহজে প্রবেশ করতে পারে। প্রতি বিদেশির জন্য ২০০ রিংগিত থেকে ২ হাজার ৫০০ রিংগিত পর্যন্ত ঘুষ দেওয়া হতো, যার ‘কোডনেম’ নির্ধারিত ছিল জাতীয়তার ভিত্তিতে যেমন বাংলাদেশের জন্য “স্কুল বয়”, মিয়ানমারের জন্য “জান্তা”, ভারতের জন্য “রোটি চনাই” ইত্যাদি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ঘটনা মানব পাচার ও অভিবাসন চুক্তির লঙ্ঘনের ঝুঁকি বহন করে। যদিও অনেকেই বৈধ ভিসা নিয়ে প্রবেশ করেন, ‘কাউন্টার সেটিং’-এর মাধ্যমে প্রবেশকারীদের প্রকৃত পরিচয় ও উদ্দেশ্য যাচাই করা সম্ভব হয় না, যা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি।
এছাড়া শ্রমবাজারে চাহিদা ও নিয়ন্ত্রণহীন রিক্রুটমেন্ট এজেন্টদের ভূমিকা এই দুর্নীতিকে আরো উৎসাহিত করেছে। অনেক এজেন্ট নিবন্ধন ছাড়াই কাজ করেন এবং বিদেশি শ্রমিকদের দুর্বল অবস্থার সুযোগ নিয়ে তাদের অবৈধভাবে প্রবেশ করান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মালয়েশিয়াকে এখন প্রতিক্রিয়াশীল নয়, বরং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে:
- অভ্যন্তরীণ নজরদারি জোরদার করা
- অবৈধ এজেন্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা
- সীমান্ত নিরাপত্তায় প্রযুক্তিনির্ভর নজরদারি
- মানবাধিকারভিত্তিক অভিবাসন নীতি গ্রহণ
এই কেলেঙ্কারি মালয়েশিয়ার অভিবাসন ব্যবস্থায় গভীর কাঠামোগত দুর্বলতা প্রকাশ করেছে, যা শুধু অপরাধীদের শাস্তি দিয়ে সমাধান সম্ভব নয়; প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি জরুরি।
তথ্যসূত্র: বিজনেস টুডে মালয়েশিয়া