
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ হওয়ার পর ভ্রমণ ভিসার আড়ালে অবৈধভাবে বাংলাদেশ থেকে কর্মীরা যাচ্ছেন। এর ফলে বিভিন্ন সময় কর্মীরা গ্রেপ্তার হচ্ছেন এবং দেশে ফেরত আসতে বাধ্য হচ্ছেন। গ্রেপ্তার হওয়া ও ফেরত আসা কর্মীদের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত সাত মাসে ৪২৬ জন বাংলাদেশি কর্মী ফেরত এসেছেন।
এই ৪২৬ জন বাংলাদেশি কর্মীর তথ্য যাচাই করে দেখা যায়, তাদের মধ্যে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের বিমানবন্দর থেকেই ফেরত এসেছেন ৩৫৬ জন।
আর এই সাত মাসের বিভিন্ন সময়ে গ্রেপ্তার হয়ে সাজা ভোগ করে ফেরত এসেছেন ৭০ জন বাংলাদেশি। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, এই ৭০ জনের কেউ কেউ জানুয়ারির আগেই মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করেছেন। বাজার বন্ধ থাকলেও রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো কর্মীদের ভ্রমণ ভিসার নাম করে মালয়েশিয়া পাঠানোর চেষ্টা করছে।
বিমানবন্দর থেকেই ৩৫৬ বাংলাদেশি ফেরত:
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ হওয়ার পর ভ্রমণ ভিসার আড়ালে যাতে কেউ অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করতে না পারে, সে জন্য মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন পুলিশ সতর্ক অবস্থান তৈরি করে।
তাদের এই সতর্ক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশের বিমানবন্দর পার করতে পারলেও বেশির ভাগ কর্মী মালয়েশিয়ার বিমানবন্দর পার করতে পারেনি। এর ফলে সাত মাসে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যাওয়া ৩৫৬ বাংলাদেশি বিমানবন্দর থেকেই ফেরত এসেছেন।
এই ৩৫৬ জন বাংলাদেশির মধ্যে গত ২৬ জানুয়ারি ছদ্মবেশে মালয়েশিয়ায় প্রবেশকালে কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আটক হন ১২ জন। এ সময় দেশটির ইমিগ্রেশন পুলিশ জানায়, আটক ১২ বাংলাদেশি মালয়েশিয়ান ফিশারিজ একাডেমির প্রশিক্ষণার্থী সেজে দেশটিতে প্রবেশের চেষ্টা করেন।
তারা একটি আমন্ত্রণপত্র প্রদর্শন করেন। যাচাই করে দেখা যায় আমন্ত্রণপত্রটি ভুয়া। এরপর তাদের আটক করে দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
২৬ জানুয়ারির পর ২১ ফেব্রুয়ারি কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করায় ৬৮ জন বিদেশি নাগরিককে আটক করে মালয়েশিয়ার সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ ও সুরক্ষা সংস্থা (একেপিএস)। তাদের মধ্যে ৪৫ জনই ছিলেন বাংলাদেশি।
সে সময় একেপিএসের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে জানানো হয়, আটক ব্যক্তিরা পর্যটক হিসেবে প্রবেশের দাবি করলেও তারা ইমিগ্রেশন কাউন্টারের দিকে এগোননি। বরং বিমানবন্দরের খাবারের দোকান ও অন্যান্য জায়গায় ঘোরাফেরা করছিলেন এবং বিশেষ কারো জন্য অপেক্ষা করছিলেন বলে সন্দেহ করা হয়। পরে তাদের কেএলআইএ ইমিগ্রেশন অপারেশন অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। কাগজপত্র যাচাই-বাছাই শেষে তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে মালয়েশিয়ায় প্রবেশের অনুমতি না দিয়ে নোটিস টু লিভ (এনটিএল) দিয়ে দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
২১ ফেব্রুয়ারির পর একই ঘটনা ঘটে গত ১৪ জুলাই। ওই দিন ৯৬ বাংলাদেশিকে কুয়ালালামপুর বিমানবন্দর থেকেই ফেরত পাঠায় মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশন পুলিশ। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রয়োজনীয় শর্তাবলি পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় বিমানবন্দরের টার্মিনাল ১-এ মালয়েশিয়ান বর্ডার কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রটেকশন এজেন্সি তাদের দেশটিতে প্রবেশ করতে দেয়নি।
এ বিষয়ে বর্ডার কন্ট্রোল এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, সন্দেহজনক আবাসনের বুকিং, ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট করতে ব্যর্থ হওয়া এবং মালয়েশিয়ায় থাকার জন্য পর্যাপ্ত তহবিল না থাকাসহ বিভিন্ন কারণে তাদের প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়েছে।
সর্বশেষ গত ২৫ জুলাই মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকেই ২০৩ জন বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠিয়েছে দেশটির ইমিগ্রেশন পুলিশ। অভিবাসন শর্ত পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় তাদের মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। এছাড়া পর্যাপ্ত তহবিল না থাকা, আবাসনের বুকিং না থাকা এবং ভ্রমণের উদ্দেশ্য অস্পষ্ট থাকাকে এর প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
সাজা ভোগ করে ফেরত এসেছেন ৭০ জন বাংলাদেশি:
ভ্রমণ ভিসায় অবৈধভাবে গিয়ে মালয়েশিয়ার বিমানবন্দর পার হলেও দেশটির ইমিগ্রেশন পুলিশের অভিযানে তিন শতাধিক বাংলাদেশি গ্রেপ্তার হয়েছেন। এর মধ্যে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ভোগ করে ৭০ জন বাংলাদেশি দেশে ফিরেছেন। এই ৭০ জনকে সাজা শেষেই মালয়েশিয়া সরকার দেশে পাঠিয়ে দেয়।
এই ৭০ জন বাংলাদেশির মধ্যে ২৩ ফেব্রুয়ারি বিভিন্ন মেয়াদের সাজা শেষে ২৮ জনকে দেশে ফেরত পাঠায় মালয়েশিয়া। দেশটির জোহর রাজ্যের অভিবাসন বিভাগ এক বিবৃতিতে বলে, মালয়েশিয়ার অভিবাসন আইন এবং অভিবাসন প্রবিধান ১৯৬৩-এর পাশাপাশি অন্যান্য এনফোর্সমেন্ট এজেন্সি আইনের অধীনে বিভিন্ন অপরাধে সাজা পান এসব প্রবাসী। সাজা শেষে তাদের নিজ নিজ দেশের দূতাবাস থেকে নাগরিকত্ব যাচাই সম্পন্ন হওয়ার পর আকাশপথে নিজ খরচে দেশে ফেরত পাঠানো হয়। একই সঙ্গে তারা যেন ফের মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করতে না পারেন, সে জন্য কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
২৩ ফেব্রুয়ারির পর ৬ মার্চ ১১ জন, ১২ মার্চ ৯ জন ও ২১ এপ্রিল ২২ জন বাংলাদেশি বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ভোগ করে দেশে ফেরত আসেন। তাদেরও কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
তথ্যসূত্র: দৈনিক কালের কণ্ঠ