
ভারতের ওড়িশার ঝাড়সুগুড়া জেলায় সম্প্রতি বাংলা ভাষাভাষী শ্রমিকদের উপর ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে ৪৪৪ জনকে আটক করা হয়েছে, যাদের মধ্যে অধিকাংশই পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলার অভিবাসী শ্রমিক। ওড়িশা পুলিশ বলছে, তারা “অবৈধ বাংলাদেশি” সন্দেহে আটক করেছে, তবে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই ঘটনাকে “ভাষাগত প্রোফাইলিং” ও “অন্যায্য হয়রানি” হিসেবে দেখছে।
কী ঘটেছে?
- ৭ জুলাই ভোরে ঝাড়সুগুড়ার বিভিন্ন কলোনিতে অভিযান চালায় পুলিশ
- নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, মালদা, পূর্ব মেদিনীপুর, বীরভূম, দক্ষিণ ২৪ পরগনার শ্রমিকরা আটক হন
- আটকদের দুটি হোল্ডিং সেন্টারে রাখা হয়েছে, যেখানে জৈবিক ও বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহ করে যাচাই চলছে
পশ্চিমবঙ্গের প্রতিক্রিয়া
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিব ও মুখ্যমন্ত্রী ওড়িশা সরকারকে চিঠি দিয়ে “অন্যায্য ও অমানবিক আচরণ” বন্ধের দাবি জানান। তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র ও সামিরুল ইসলাম অভিযোগ করেন, “বাংলা ভাষা বলার অপরাধে” শ্রমিকদের আটক করা হয়েছে। আদালতে হেবিয়াস কর্পাস মামলা দায়ের হয়েছে, কারণ আটকদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে পেশ করা হয়নি, যা সংবিধান লঙ্ঘন।
শ্রমিকদের অভিজ্ঞতা
কবির শেখ, যিনি মুর্শিদাবাদ থেকে এসেছেন; বলেন- “আমি বাইরে ছিলাম, তাই ধরা পড়িনি। কিন্তু যারা ছিলেন, তাদের বাসস্থান প্রমাণপত্র দেখিয়েও ছাড়া হয়নি।”
হাজিমুদ্দিন শেখ, বীরভূমের কুতুলপুর গ্রামের বাসিন্দা; বলেন- “আমার ভাই ১০ বছর ধরে কাজ করছে, কখনো এমন হয়নি।”
একজন মুক্ত শ্রমিক বলেন, “আমাদের ২০০ জনের জন্য মাত্র ৩টি টয়লেট ছিল, খাবার ছিল শুধু ভাত আর তরকারি।"
ওড়িশা পুলিশের অবস্থান
পুলিশ জানিয়েছে, যারা বৈধ নথিপত্র দেখাতে পারছেন, তাদের ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া জাতীয় নিরাপত্তা ও নাগরিকত্ব যাচাইয়ের স্বার্থে এই অভিযান চালানো হয়েছে বলেও জানান স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তা। যে কেউ সন্দেহভাজন হলে তাকে যাচাই না করে ছাড়া যাবে না বলে জানিয়েছেন নর্দার্ন রেঞ্জের আইজি হিমাংশু লাল।
এই ঘটনাটি শুধু আইনশৃঙ্খলা নয়, বরং রাষ্ট্রের নাগরিকদের প্রতি আচরণ, ভাষাগত বৈষম্য ও অভ্যন্তরীণ অভিবাসনের ন্যায্যতার প্রশ্ন তুলে ধরেছে।
তথ্যসূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস