
তাইওয়ানে অভিবাসী শ্রমিকদের জীবন এখন আর শুধু শ্রমের গল্প নয়, এটি এক অদৃশ্য পলায়নের ইতিহাস। বৈধভাবে কাজ করতে এসে অনেকেই এখন অবৈধ অভিবাসী হিসেবে জীবন কাটাচ্ছেন। কারণ তারা দমনমূলক কর্মপরিবেশ, দালালদের শোষণ ও সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা থেকে পালিয়ে প্রান্তিক জীবনের আশ্রয় নিয়েছেন।
ফিলিপাইনের বার্নার্ড ২০১৬ সালে বৈধভাবে তাইওয়ানে আসেন। কিন্তু ২০২৪ সালে তার দালাল পাসপোর্ট কেড়ে নিতে চায়, চাকরি ছাড়তে বাধ্য করে এবং ক্ষতিপূরণ ছাড়াই সম্পর্ক ছিন্ন করতে বলে। বার্নার্ড তা প্রত্যাখ্যান করেন, ফলে তাকে ব্ল্যাকলিস্ট করা হয়। মেয়ের পড়াশোনার খরচ চালাতে তিনি এখন নির্মাণ খাতে অবৈধভাবে কাজ করছেন, অথচ নিজেকে “পাখির খাঁচায় বন্দি” বলে মনে করেন।
তাইওয়ানের ব্রোকার বা দালাল ব্যবস্থা ১৯৯২ সালে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে চালু হয়। তারা শ্রমিকদের বাসস্থান, খাবার, চাকরির শর্ত, এমনকি চিকিৎসা ও সরকারি সেবা পাওয়ার পথও নিয়ন্ত্রণ করে। শ্রম মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে অবৈধ অভিবাসীর সংখ্যা ৯০ হাজার, যা গত চার বছরে দ্বিগুণ হয়েছে। এর মধ্যে ভিয়েতনামের ৫৭ হাজার ৬১১, ইন্দোনেশিয়ার ২৮ হাজার ৩৬৩ এবং ফিলিপাইনের ২ হাজার ৭৫০ জন।
তাইচুং শহরের Ugnayan Center পরিচালনাকারী ক্যাথলিক পুরোহিত জয় তাজোনেরা বলেন, “এই ব্যবস্থায় দালালরা শ্রমিকদের বিপক্ষে ক্ষমতা ব্যবহার করে, আর নিয়োগকর্তারা নির্দোষ সেজে থাকেন।” দালালরা মাসে ৫০-৬০ ডলার ফি, চাকরি বদল, হাসপাতাল বীমা, ছুটি ও নথিপত্রের জন্য অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে।
Serve the People Association-এর পরিচালক লেনন ওয়াং বলেন, “এই জরিমানা শুধু আত্মসমর্পণ ঠেকাবে, সমস্যার মূল কারণ নয়।” তিনি বলেন, শিশু পরিচর্যা ও মৎস্য খাতে শ্রমিকদের কোনো ন্যূনতম মজুরি নেই, ফলে তারা অর্ধেক বেতন পান, যার বড় অংশ দালালরা কেটে নেয়।
তাইপেইয়ের Harmony Home নামক এনজিও এখন অবৈধ নারী শ্রমিক ও শিশুদের আশ্রয় দিচ্ছে, যাদের সংখ্যা ২০২৫ সালের এপ্রিলেই ১৪০ জনে পৌঁছেছে। তবে সরকার তাদের চিকিৎসা বা খরচ বহন করে না।
তাইচুংয়ের পাহাড়ি এলাকা লিশানে শত শত অবৈধ শ্রমিক পিচ, নাশপাতি ও বাঁধাকপি চাষে কাজ করছেন। স্থানীয় জমির মালিকরা পুলিশের সঙ্গে মৌন সমঝোতায় তাদের কাজে লাগান। কিন্তু ফসল তোলার পর বেতন না দেওয়া, অভিযোগ করলে বহিষ্কারের হুমকি- এসবও নিয়মিত ঘটনা।
তাইওয়ানের এই বাস্তবতা শুধু অভিবাসন নয়, এটি শ্রম, মানবাধিকার ও নীতিগত ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি।
তথ্যসূত্র: আল জাজিরা নিউজ