
মালয়েশিয়ায় সামাজিক আবাসন প্রকল্পে দীর্ঘসূত্রতা, অব্যবস্থাপনা ও নীতিগত দুর্বলতার কারণে শুধু স্থানীয় দরিদ্র জনগোষ্ঠী নয়, বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশীয় প্রবাসী শ্রমিকরাও চরম মানবিক সংকটে পড়েছেন। বিশেষ করে নির্মাণ, পরিষেবা ও উৎপাদন খাতে কর্মরত শ্রমিকদের জন্য নিরাপদ ও মানবিক আবাসনের অভাব এখন একটি নীরব সংকটে রূপ নিয়েছে।
সরকারি তথ্যমতে, ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় ৩৪৭টি ‘সিক’ প্রকল্প, ২৩০টি বিলম্বিত প্রকল্প এবং ১১৬টি পরিত্যক্ত প্রকল্প রয়েছে, যার সম্মিলিত উন্নয়ন মূল্য RM107.04 বিলিয়ন। এই প্রকল্পগুলোর একটি বড় অংশে প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য আবাসন সুবিধা অন্তর্ভুক্ত থাকার কথা থাকলেও বাস্তবে তা অধরা।
বাংলাদেশি শ্রমিকদের অনেকেই নিয়োগদাতা কর্তৃক সরবরাহকৃত অস্থায়ী ডরমিটরিতে বসবাস করছেন, যা অপরিচ্ছন্ন, অতিরিক্ত জনাকীর্ণ এবং নিরাপত্তাহীন। কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে কিছু উন্নয়ন ঘটলেও বেশির ভাগ শ্রমিক এখনো একই দুরবস্থায় রয়েছেন। মালয়েশিয়ার শ্রম আইনে আবাসন সংক্রান্ত ন্যূনতম মান নির্ধারিত থাকলেও নিয়োগদাতাদের উদাসীনতা ও তদারকির অভাবে তা কার্যকর হচ্ছে না।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আবাসন ব্যবস্থাকে নিয়োগদাতারা শ্রম নিয়ন্ত্রণের একটি উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করছেন, যেখানে শ্রমিকদের ব্যক্তিগত জীবনও নিয়ন্ত্রণাধীন হয়ে পড়ছে। এতে মানসিক স্বাস্থ্য, সামাজিক অন্তর্ভুক্তি ও কর্মক্ষমতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
মালয়েশিয়া সরকার কিছু উদ্যোগ নিয়েছে; যেমন Centralised Labour Quarters (CLQ) চালু করা হয়েছে, যা নিরাপদ ও নিয়ন্ত্রিত আবাসন ব্যবস্থা। তবে এই সুবিধা এখনো সীমিত সংখ্যক শ্রমিকের জন্য প্রযোজ্য এবং বাংলাদেশি শ্রমিকদের বড় অংশ এই ব্যবস্থার বাইরে।
বাংলাদেশ দূতাবাস ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উচিত মালয়েশিয়া সরকারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে শ্রমিকদের আবাসন অধিকার নিশ্চিত করা, বিশেষ করে যেসব শ্রমিক সামাজিক আবাসন প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে বঞ্চিত হচ্ছেন।
এই সংকট শুধু আবাসনের নয়; মানবাধিকার, শ্রমিক কল্যাণ ও আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তির প্রশ্নেও গুরুত্বপূর্ণ।
তথ্যসূত্র: বিজনেস টুডে মালয়েশিয়া