
জাপানে জন্মহার কমা এবং মৃত্যুহার বেড়ে যাওয়াতে অর্থনীতি ও শ্রমবাজারে সৃষ্টি করছে গভীর সংকট। ২০২৪ সালে জন্মহার সর্বনিম্নে পৌঁছেছে, যা ভবিষ্যতে শ্রমশক্তির ঘাটতি এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
২০২৪ সালে জাপানে জন্মের সংখ্যা ৬৮৬,০৬১-এ নেমে এসেছে, যা ১৮৯৯ সালের পর সর্বনিম্ন। ফার্টিলিটি রেট ১.১৫-এ দাঁড়িয়েছে, যা স্থিতিশীল জনসংখ্যা বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় ২.১-এর অনেক নিচে। বিশেষ করে টোকিওতে এই হার দ্বিতীয় বছরের মতো ১-এর নিচে রয়েছে।
জাপানের জনসংখ্যার প্রায় ৩০% এখন ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সী। এই বার্ধক্যজনিত পরিস্থিতি শ্রমবাজারে গুরুতর প্রভাব ফেলছে। ২০২৪ সালে, শ্রমসংকটের কারণে ৩৪২টি কোম্পানি দেউলিয়া হয়েছে, যা পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ৩২% বেশি। বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলো এই সংকটে বেশি ভুগছে।
শ্রমসংকট মোকাবিলায় জাপান সরকার প্রযুক্তি ও অভিবাসনের দিকে নজর দিচ্ছে। "Society 5.0" উদ্যোগের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা, কৃষি ও খুচরা খাতে রোবট ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার বাড়ানো হচ্ছে। তবে এই প্রযুক্তির উচ্চ খরচ ও সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা একটি চ্যালেঞ্জ।
অভিবাসন নীতিতেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। ২০২৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত জাপানে বিদেশি কর্মীর সংখ্যা ২৩ লাখে পৌঁছেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১২.৪% বৃদ্ধি।
শ্রমশক্তির ঘাটতি জাপানের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, শ্রমসংকটের কারণে ২০২৫ সাল পর্যন্ত জাপানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বার্ষিক ০.৭% হ্রাস পাবে, যা ২০২৫ সালের পর ০.৯% হতে পারে।
এছাড়া বার্ধক্যজনিত কারণে স্বাস্থ্যসেবা ও পেনশন ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা দেশের আর্থিক ভারসাম্যে চাপ সৃষ্টি করছে।
জাপানের কঠোর কর্মসংস্কৃতি, উচ্চ জীবনযাত্রার ব্যয় ও পরিবার গঠনের প্রতি অনীহা জন্মহার হ্রাসের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ কারণ। ২০২৩ সালে বিবাহের সংখ্যা ৫ লাখের নিচে নেমে এসেছে, যা ১৯১৭ সালের পর সর্বনিম্ন।
এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় টোকিও মেট্রোপলিটন সরকার ২০২৫ সালের এপ্রিল থেকে কর্মীদের জন্য চার দিনের কর্মসপ্তাহ চালু করার পরিকল্পনা করছে, যাতে কর্মজীবন ও পারিবারিক জীবনের মধ্যে ভারসাম্য আনা যায়।
জাপানের জনসংখ্যা হ্রাস ও বার্ধক্যজনিত পরিস্থিতি শ্রমসংকট ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের সৃষ্টি করছে। যদি এই প্রবণতা অব্যাহত থাকে, তবে জাপানের অর্থনীতি ও সমাজব্যবস্থা আরো সংকটে পড়বে। এই সংকট মোকাবিলায় দীর্ঘমেয়াদি ও সমন্বিত কৌশল প্রয়োজন।
মাইগ্রেশন কনসার্ন রিপোর্ট