Logo
×

Follow Us

এশিয়া

নেপালের শেষ যাযাবর সম্প্রদায় রাউতের অস্তিত্ব সংকটে

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৭ মে ২০২৫, ২৩:১৭

নেপালের শেষ যাযাবর সম্প্রদায় রাউতের অস্তিত্ব সংকটে

নেপালের সুরখেত জেলার গিরিঘাট অরণ্যে বসবাসরত রাউতে সম্প্রদায় দেশের শেষ যাযাবর গোষ্ঠী হিসেবে পরিচিত। তাদের প্রাচীন জীবনধারা ও সংস্কৃতি আজ বিলুপ্তির মুখে।

রাউতের জীবনধারা ও ঐতিহ্য

রাউতে জনগোষ্ঠী প্রথাগতভাবে কৃষি, স্থায়ী বসতি ও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাকে প্রত্যাখ্যান করে। তারা মৌসুমি ভিত্তিতে স্থান পরিবর্তন করে, শীতকালে সমতলে ও গ্রীষ্মকালে পাহাড়ে আশ্রয় নেন। তাদের জীবিকা মূলত বানর শিকার, বুনো কন্দমূল সংগ্রহ এবং কাঠের তৈরি হস্তশিল্প বিনিময়ের মাধ্যমে চালিত হয়।

জনসংখ্যা হ্রাস ও সংকট

নেপালের ২০২১ সালের জাতীয় জনসংখ্যা অনুযায়ী, রাউতের সংখ্যা ছিল ৫৬৬। তবে সামাজিক সেবা কেন্দ্র (SOSEC) নেপালের তথ্য অনুযায়ী, গত ছয় বছরে ৩২টি শিশু জন্মগ্রহণ করলেও ৪২ জনের মৃত্যু হয়েছে, ফলে বর্তমানে তাদের সংখ্যা মাত্র ১৩৭-এ নেমে এসেছে।

নারীদের ভূমিকা ও চ্যালেঞ্জ

রাউতে সমাজে নারীরা রান্না, পানি সংগ্রহ ও খাদ্য জোগাড়ের মতো দৈনন্দিন কাজ পরিচালনা করেন। তবে স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার বিষয়ে তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ সীমিত।

২২ বছর বয়সী গজালি সাহি বলেন, "এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাওয়া খুব কঠিন, কারণ নতুন জায়গায় আরো কাজ করতে হয়। নতুন বসতি তৈরি, পানি আনা, রান্না করা সবই নারীদের দায়িত্ব। কখনো কখনো মনে হয়, আমি যদি রাউতে না হয়ে বাইরের জগতে জন্মাতাম, তাহলে হয়তো সুখী হতাম।"

শিক্ষার প্রতি আগ্রহ ও বাধা

যদিও তরুণ প্রজন্ম শিক্ষার প্রতি আগ্রহী, তবে বয়োজ্যেষ্ঠরা তা অনুমোদন করেন না। SOSEC-এর শিক্ষক লাল বাহাদুর খত্রি জানান, "অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের পড়াশোনা করতে দেন না, কিন্তু শিশুরা খুবই আগ্রহী। তাই আমরা গোপনে তাদের নাম লেখা ও দৈনন্দিন স্বাস্থ্যবিধি শেখাচ্ছি।"

সরকারের সহায়তা ও সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া

নেপাল সরকার রাউতে সম্প্রদায়কে মাসিক ৪ হাজার নেপালি রুপি ($২৯.৫) সামাজিক নিরাপত্তা ভাতা প্রদান করে। তবে অনেক রাউতে বয়োজ্যেষ্ঠরা পরিবর্তনের বিরুদ্ধে।

৪৯ বছর বয়সী রাউতে নেতা সূর্য নারায়ণ সাহি বলেন, "রাউতে শিশুরা স্কুলে যায় না। তারা কন্দমূল ও ব্যাঙ খেতে অভ্যস্ত। সরকার আমাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে বলছে, কিন্তু আমরা স্থায়ী বসতি গ্রহণ করলে রাউতের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হবে।"

ভবিষ্যতের দৃষ্টিভঙ্গি

গজালি বিশ্বাস করেন, পরিবর্তন অনিবার্য, তবে সময়সাপেক্ষ। তিনি বলেন, "পরিবর্তন সময় নেবে, সম্ভবত বয়োজ্যেষ্ঠ প্রজন্মের পর।"

এই পরিস্থিতিতে, রাউতে সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি ও জীবনধারার সংরক্ষণে সরকার ও বেসরকারি সংগঠনগুলোর সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।

তথ্যসূত্র: আল জাজিরা নিউজ

Logo