
উত্তর আফ্রিকা হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর স্বপ্নে হাজার হাজার অভিবাসী প্রতি বছর পাড়ি জমান নাইজার মরুভূমির ভয়ংকর পথে। এই রুটটি মূলত শুরু হয় পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকার দেশগুলো থেকে। বিশেষ করে গিনি, সেনেগাল, মালি, বুরকিনা ফাসো, আইভরি কোস্ট এবং নাইজেরিয়া থেকে। অভিবাসীরা প্রথমে নাইজারের আগাদেজ শহরে পৌঁছান, যেটি ‘সাহারার প্রবেশদ্বার’ হিসেবে পরিচিত। এখান থেকেই শুরু হয় মরুভূমি পাড়ি দিয়ে লিবিয়া বা আলজেরিয়ার দিকে যাত্রা, যার শেষ গন্তব্য ইউরোপের উপকূল।
এই রুটে পাচারকারীদের একটি সুসংগঠিত চক্র সক্রিয়, যারা নিজেদের ‘পাসার’ বা ভ্রমণ-সংগঠক হিসেবে পরিচয় দেয়। তারা অভিবাসীদের কাছ থেকে বিপুল অর্থ আদায় করে, প্রতিশ্রুতি দেয় নিরাপদ যাত্রার। কিন্তু বাস্তবে অনেককে পরিত্যক্ত করা হয় মরুভূমির মাঝপথে, যানবাহন বিকল হলে খাদ্য ও পানির অভাবে মৃত্যু ঘটে। ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত অন্তত ৩৫ জন অভিবাসীর মৃত্যু হয়েছে এই পথে।
আগাদেজে repealed হওয়া ২০১৫ সালের মানব পাচারবিরোধী আইন (Law 2015-36) এই চক্রকে আবারো সক্রিয় করে তুলেছে। সামরিক সরকার ক্ষমতায় আসার পর আইনটি বাতিল হলে পাচারকারীরা প্রকাশ্যে ব্যবসা চালাতে শুরু করে। স্থানীয় অর্থনীতির বড় অংশই এখন এই অনিয়মিত অভিবাসন ব্যবসার ওপর নির্ভরশীল।
লিবিয়া ও আলজেরিয়ার সীমান্ত পুলিশ প্রায়ই অভিবাসীদের ফেরত পাঠায়, যার ফলে হাজার হাজার মানুষ নাইজারের মরুভূমিতে আটকা পড়ে। ২০২৪ সালে আলজেরিয়া ৩১ হাজার অভিবাসীকে নাইজারে বহিষ্কার করে, আর ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে নাইজার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রায় ১৬ হাজার মানুষকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
এই রুটে পাচার হওয়া অভিবাসীদের মধ্যে বেশির ভাগই তরুণ, যাদের বয়স ১৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। তারা মূলত দারিদ্র্য, বেকারত্ব, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সহিংসতা থেকে পালিয়ে নিরাপদ জীবনের আশায় যাত্রা শুরু করে। কিন্তু সাহারার বালুরাশি তাদের জন্য হয়ে ওঠে মৃত্যুকূপ।
জাতিসংঘ, আইওএম ও ইউএনএইচসিআর এই রুটে মানবিক সহায়তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে কাজ করছে, তবে সীমিত সম্পদ ও রাজনৈতিক জটিলতায় কার্যকর পদক্ষেপ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান নাইজেরিয়া